
রাজ্যের মহিলা ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজকল্যাণ দফতরের নয়া চেয়ারপার্সন পদে নিয়োগ হলেন তাপসী মণ্ডল
বুধবার রাজ্যের মহিলা ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজকল্যাণ দফতরের চেয়ারপার্সন হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে তাপসী মণ্ডলকে। বিরোধীদের কটাক্ষ, সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্য রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় আলোচিত বিষয় হল তাপসী মণ্ডলের দল বদল। যবে থেকেই গেরুয়া শিবির ছেড়ে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, মনে করা হচ্ছে রাজ্যের বিরোধীদল নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বড়সড় ধাক্কা দিতে পেরেছেন তিনি। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর দীর্ঘ সময় তার হাত থেকে দূরে থাকা হলদিয়ার দখল নিয়েছিলেন মূলত এই তাপসী মণ্ডলকে নিজের দলে টানার পর। এবার তিনিও হাতছাড়া হওয়ায় হলদিয়ায় বড় ধাক্কা খেলেন বিরোধী দলনেতা। এবার এই দল বদলের জন্যই বড় পুরস্কার পেলেন তাপসী মণ্ডল। হলদিয়ার বিধায়ক তপসী মণ্ডল বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পরই বড় দায়িত্ব পেলেন। বিরোধী শিবিরের একাংশের দাবি, তৃণমূলে যোগদানের ‘পুরস্কার’ দেওয়া হল তাপসী মণ্ডলকে। 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রতীকে হলদিয়া থেকে জয়ী হয়েছিলেন তপসী মণ্ডল। তবে নির্বাচনের পর বড় সাংগঠনিক দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ছিল। এই অবস্থায় গত 10 মার্চ তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপি ছাড়া আর সিদ্ধান্ত নেন। গত 9 মার্চ সুব্রত বক্সির সঙ্গে বৈঠকের পর দিনই (10 মার্চ) তিনি যোগ দেন ঘাসফুল শিবিরে। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, শিবির পরিবর্তন করার কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি বিশেষ দায়িত্ব পেলেন। যদিও প্রকাশ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলছেন, তাপসী মণ্ডলের দলবদলের তেমন কোনো প্রভাব বিজেপির সংগঠনিক ক্ষেত্রে পড়বে না। মানুষ দলবদলুকের সমর্থন করে না। কাজেই হলদিয়ার হিন্দু ভোটাররা তাপসীকে ভোট দেবেন না। তবে এই অবস্থায় তাপসী ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার হলদিয়ায় তাই এক গুরুত্বপূর্ণ সভা করবেন বিরোধী দলনেতা। যেহেতু, এই মুহূর্তে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে তাই প্রকাশ্য কোন সভা নয়। হলদিয়ার একটি হলে হবে এই সভা। তপসী মণ্ডলের তৃণমূলে যোগদানের রাজনৈতিক তাৎপর্য গভীর। প্রথমত, তিনি এতদিন শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ বিধায়ক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর পরিষদীয় দলের সদস্য ছিলেন। অন্যদিকে, তিনি শুভেন্দুর নিজ জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী। ফলে এই দলবদল বিরোধী দলনেতার জন্য বড় ধাক্কা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই অবস্থায় এই ধাক্কা কীভাবে কাটিয়ে উঠে বিজেপি সেটাও দেখতে চাইছে তারা। অতীত দেখলে বিধায়ক তপসী মণ্ডলের রাজনৈতিক সফর বেশ চমকপ্রদ। একসময় তিনি সিপিএমের নেত্রী ছিলেন। 2016 সালের বিধানসভা নির্বাচনে যখন রাজ্যে তৃণমূল ঝড় বইছিল, তখন তিনি কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী হিসেবে হলদিয়া আসন থেকে জয়ী হন। উল্লেখযোগ্য বিষয়, তখন হলদিয়ায় তৃণমূলের দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তবুও তপসী সেখানে জয় ছিনিয়ে নেন। পরে শুভেন্দুর প্রভাবে তিনি সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে আবারও জয় পান তিনি। এতদিন তাঁকে শুভেন্দুর অনুগত বলেই মনে করা হতো তাঁকে। শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকা তাপসী মণ্ডল যখন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের এলেন তখন এই দল বদল আগামী বছর বিধানসভা ভোটে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে সেটাই এখন দেখার। যদিও, তাপসীর দলবদল নিয়ে কটাক্ষ করেছেন প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীও। তিনি বলছেন, এটা তৃণমূল কংগ্রেসের পুরনো খেলা। তবে মানুষ এখন তৃণমূলকে বুঝতে পেরেছে ৷ তাই দল বদলে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। ফলে এসব পুরস্কার কোনও ভাবেই কাজে আসবে না।