
মধ্যপ্রদেশে ৫০ হাজার সরকারি কর্মী ভুয়ো! ডাবল ইঞ্জিনে ২৩০ কোটির বেতন কেলেঙ্কারি
সরকারি নথিতে তাঁদের নাম রয়েছে। রয়েছে এমপ্লয়ি কোডও। কিন্তু গত প্রায় ছ’মাস ধরে বেতন ছাড়া হচ্ছে না মধ্যপ্রদেশের ৫০ হাজার সরকারি কর্মীর। তাতেও অবশ্য কেউ অভিযোগ জানাচ্ছেন না। কিন্তু কেন? ‘ডাবল ইঞ্জিন’ এই রাজ্যে ফাইলের তলায় কী বড়সড় রহস্য চাপা রয়েছে? এই ৫০ হাজার সরকারি কর্মী কি ভুয়ো? তাহলে কি ব্যাপম কাণ্ডের পর এবার ভারতের ইতিহাসের বৃহত্তম বেতন কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে মধ্যপ্রদেশে? ২৩০ কোটি টাকার এই বেতন দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে উঠছে এমন বেশ কিছু গুরুতর প্রশ্ন। ৬ হাজারের বেশি অফিসারের ভূমিকাও আতশকাচের নীচে। যদিও সদুত্তর না দিয়ে পিঠটান দিচ্ছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী জগদীশ দেবড়া। রাজ্যের মোট সরকারি কর্মীর ৯ শতাংশই এই ৫০ হাজার জন। তাদের মধ্যে ৪০ হাজার স্থায়ী কর্মী। বাকি ১০ হাজার অস্থায়ী। কিন্তু একসঙ্গে ৫০ হাজার কর্মীর বেতন কেন ছ’মাস ধরে আটকে রইল? তাঁরা কি বেতনহীন ছুটিতে রয়েছেন? সাসপেন্ড হয়েছেন? নাকি এই ৫০ হাজারই আসলে ‘ভূতুড়ে কর্মী’? সরকারি খাতায় ভুয়ো কর্মী দেখিয়ে বেতনের টাকা কেলেঙ্কারি চলছিল? গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় গত ২৩ মে পদক্ষেপ নিয়েছে মধ্যপ্রদেশের সরকারের কমিশনার অব ট্রেজারি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস (সিটিএ)। রাজ্যের ৬ হাজারের বেশি ড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবার্সিং অফিসারকে (ডিডিও) চিঠি লিখে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই চিঠিতেই স্বীকার করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ওই কর্মীদের বরাদ্দ হয়নি। এমপ্লয়ি কোড থাকলেও তাঁদের ভেরিফিকেশন অসম্পূর্ণ। এমনও নয় যে, এই কর্মীরা চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ, চাকরি ছাড়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াও হয়নি। ওই চিঠিতেই সম্ভাব্য ২৩০ কোটি টাকার বেতন কেলেঙ্কারি নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা তলব করা হয় ডিডিওদের কাছে। শুক্রবারই সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে। কমিশনার অব ট্রেজারি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস (সিটিএ) ভাস্কর লাকশকর সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, ‘আমরা নিয়মিত ডেটা অ্যানালিসিস করি। আর তা করতে গিয়েই এই অনিয়ম সামনে আসে। সম্ভাব্য অর্থ নয়ছয়ের ঝুঁকি কমাতেই তদন্তের এই প্রক্রিয়া।’ গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ সামনে আসায় ট্রেজারি দপ্তর মধ্যপ্রদেশজুড়ে ভেরিফিকেশন অভিযানে নেমেছে। এই অবস্থায় অর্থদপ্তরের এক প্রবীণ আধিকারিকের বক্তব্য, চাকরি ছাড়ার প্রক্রিয়া ছাড়াই টানা কেউ যদি ছ’মাস বেতন না নিয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই কোনও গরমিল রয়েছে। বিড়ম্বনার মুখে পড়ে এই প্রসঙ্গে জবাব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের অর্থমন্ত্রী। দৃশ্যতই অপ্রস্তুত জগদীশ দেবড়া বলেন, ‘দেখুন, যা যা প্রক্রিয়া মেনে চলা উচিত, নিয়ম মোতাবেকই তা করা হয়েছে। যা হয়েছে নিয়ম মেনেই হয়েছে। ঠিক আছে…এবার আসুন।’ আর কোনও কথা না বলে সোজা দপ্তরের ভিতরে ঢুকে যান তিনি। শুধু ব্যাপম নয়, গত পাঁচ-ছ’বছরে রেশন, ই-টেন্ডারিং থেকে ত্রাণ, কনস্টেবল নিয়োগ—হাজার হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে মধ্যপ্রদেশে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগ বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে। ভুয়ো সরকারি কর্মী কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এক্স হ্যান্ডলে তাদের অভিযোগ, ‘লুটে খাও, মজা পাও!— এটাই বিজেপির মডেল। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী কি জেনে শুনে ২৩০ কোটি টাকার দুর্নীতিকে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিয়েছেন?’ প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী চুপ কেন? এই কোটি কোটি টাকার হিসেব কে দেবে? সেই প্রশ্নও তুলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।