দোল এবং হোলিতে ড্রোন হামলার আশঙ্কা কলকাতায়, জারি কড়া সতর্কতা

মঙ্গলবার বাঙালিদের দোল উৎসব। আর তার পরেরদিনই দেশ মেতে উঠবে হোলিতে(Holi)। কিন্তু সেই দোল ও হোলির দুই দিনই কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের একাধিক স্থানে জঙ্গি হানার আশঙ্কা থাকছে। কার্যত জঙ্গি হামলার হুঁশিয়ারি ধেয়ে এসেছে দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন Popular Front of India ও Students Islamic Movement of India বা SIMI’র তরফে। বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোন দিয়ে আকাশপথে হানাদারি চালানো হবে বলে হুমকি দিয়েছে তারা। সেই সব হামলার টার্গেট হিসাবে উঠে এসেছে হাওড়া, শিয়ালদহ, আসানসোল, মালদা টাউন সহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন, বিমানবন্দর, এমনকী রাজভবনও। এই হামলার ছকের কথা সামনে আসতেই তোলপাড় শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। গত ২ মার্চ এই মর্মে একটি গোপন বার্তা দিয়েছেন পূর্ব রেলের আইজি তথা প্রিন্সিপাল চিফ সিকিউরিটি কমিশনার (পিসিএসসি) পরমশিব। সতর্ক করেছেন হাওড়া, শিয়ালদহ, আসানসোল, মালদহের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারদের (ডিআরএম)। সেই বার্তায় সাফ বলা হয়েছে, গত ১ মার্চ বারাণসী বিমানবন্দরের অধিকর্তা একটি চিঠি পেয়েছেন। তাতে হোলির দিন (৮ মার্চ) বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোনের সাহায্যে একাধিক বিমানবন্দর, রেলস্টেশন এবং রাজভবনে জঙ্গি হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। পিএফআই এবং সিমি-র সঙ্গে জড়িত একটা গোষ্ঠী এই হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা। তাই সংশ্লিষ্ট সব ডিআরএমকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করা হচ্ছে। পূর্ব রেলের আইজির বার্তায় বিস্ফোরক এবং ড্রোন তৈরির সম্পর্কে গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের দাবি, বিহারের বেগুসরাইতে বারাউনি পলিটেকনিক কলেজের কেমিক্যাল ল্যাবরেটরিতেই তৈরি হয়েছে যাবতীয় বিস্ফোরক। আকাশপথে হামলার জন্য ড্রোনের নকশা এবং আনুষঙ্গিক প্রযুক্তি পর্যন্ত জোগাড় করা হয়েছে বাংলার প্রতিবেশী ওই রাজ্য থেকে। তবে তার উৎস পাটনার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট টেকনোলজির মতো কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান। সেখানকার মেকানিক্যাল শাখার সহায়তা তৈরি হয়েছে বিস্ফোরক বহনের সেই ড্রোন। গোপন বার্তা দেওয়ার কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন পরমশিব। শনিবার ফোনে তিনি বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা এজেন্সির মাধ্যমে হোলিতে এই ধরনের জঙ্গি হামলার ‘ইনপুট’ পেয়েছি। দেশব্যাপী এই নাশকতা চালানো হতে পারে। রিপোর্ট অন্তত তেমনই। রেল স্টেশনের পাশাপাশি রাজভবন এবং বিমানবন্দরের কথা বলা হয়েছে রিপোর্টে। তবে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের বাসভবন হামলার লক্ষ্য কি না, তা অবশ্য নিশ্চিত করে বলতে পারেননি পূর্ব রেলের আইজি। তিনি আরও বলেন, দেশের অন্য কোনও রাজভবন জঙ্গিরা বেছে নিতে পারে। আমরা সবরকমের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে রাখছি। জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশনে হোলির দিন সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে, যাতে আকাশপথে ড্রোনের মতো কিছু দেখা গেলে গুলি করে তা নামিয়ে আনা যায়। এপ্রসঙ্গে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, রেল স্টেশন কিংবা বিমানবন্দর উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি অতীতেও শোনা গিয়েছে। কিন্তু জঙ্গিদের রেডারে রাজভবনের সংযুক্তি কার্যত এই প্রথম এবং অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সাম্প্রতিককালে পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, দিল্লি, তামিলনাড়ু সহ অবিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যে সরকার-রাজভবনের সংঘাত চরমে। এই আবহে হোলিতে জঙ্গিদের নিশানায় রাজভবনের ঢুকে পড়া রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে সাড়া ফেলে দিয়েছে।

error: Content is protected !!