দিল্লিতে ‘গণধর্ষিতা’ ওডিশার তরুণী গবেষক, ৭০০ ফুটেজ ঘেঁটে ৩ অভিযুক্তকে পাকড়াও করল পুলিশ

গত ১১ অক্টোবর দিল্লির সরাই কালে খান এলাকায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন এক তরুণী। তাঁর পরনে ছিল একটি লাল কুর্তা। তাঁর ওই অবস্থা দেখে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন এক পথচারী। ফোন করেন পুলিশে। এরপর ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশই ওই তরুণীকে উদ্ধার করে এইমস ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করে। সূত্রের খবর, সেই সময় ওই তরুণী চিকিৎসকদের জানান, তাঁকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু, কোথায়, কখন, কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটা পরিষ্কার করে বলতে পারেননি তিনি। এমনকী, সেই অবস্থায় ওই তরুণী পুলিশকে কোনও বয়ান দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন না বলেও জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। তারপরও এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। তার জন্য খতিয়ে দেখতে হয়েছে ৭০০টি সিসিটিভি ফুটেজ! তদন্ত চালাতে হয়েছে সমাজকর্মীর ছদ্মবেশে! এই ঘটনায় সানলাইট কলোনি থানায় গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হলেও, ঘটনার সূত্র বলতে তেমন কিছুই ছিল না। সেই অবস্থাতেই তদন্ত শুরু করে দক্ষিণ-পূর্ব জেলা পুলিশ। তার জন্য বিশেষ একটি দলও গঠন করা হয়। ঘটনা ঘটার ২০ দিন কেটে যাওয়ার পর শেষমেশ আসে সাফল্য। প্রায় ৭০০ সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখার পর তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় আক্রান্ত তরুণী একজন সমাজকর্মী এবং গবেষক। তিনি আদতে ওডিশার বাসিন্দা। মূলত, এইচআইভি আক্রান্ত ও পুরীতে হিংসার কবলে পড়া মহিলাদের নিয়ে কাজ করেন তিনি। তদন্তে জানা যায়, ওই তরুণী তাঁর বাড়ির সদস্যদের কিছু না জানিয়েই গত ৯ মে দিল্লিতে এসে পৌঁছন। এদিকে, গত ৯ জুন ওডিশার পুরীর একটি থানায় তাঁর নামে নিখোঁজ ডায়ারি করা হয়। অন্যদিকে, দিল্লিতে পৌঁছে এক পরিচিতের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন ওই তরুণী। সেই পরিচিতের দাবি, কিছু দিন তাঁর সঙ্গে থাকার পর সেখান থেকে চলে ওডিশা থেকে দিল্লি আসা ওই তরুণী। অথচ, এরপরও ওডিশায় ফিরে যাননি তিনি। উলটে পরিবারের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে দিল্লির বিভিন্ন রেল স্টেশন, ফুট ওভার ব্রিজ এবং বাসস্টপে থাকতে শুরু করেন!

পরবর্তীতে, রক্তাক্ত অবস্থায় তরুণীকে উদ্ধার করার পর চিকিৎসকদের অনুমতি নিয়েই পুলিশের একজন লেডি কনস্টেবল সমাজকর্মী সেজে আক্রান্তের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। সেইসঙ্গে, একজন ওড়িয়া নার্সকে ওই তরুণীর দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর এই দু’জনকেই এইমসে চিকিৎসাধীন ও তরুণী জানান, তার উপর যে তিনজন অত্যাচার করেছিল, তাদের মধ্যে একজন অটোচালক এবং অন্যজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তবে, কোথায় এবং কখন তাঁর সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছিল, তা বলতে পারেনি আক্রান্ত তরুণী। এরপরই সম্ভাব্য ঘটনাস্থল ধরে নিয়ে প্রায় ৭০০টি সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেন দিল্লি পুলিশের সদস্যরা। শেষমেশ ১০ অক্টোবরের একটি ফুটেজে প্রথম অভিযুক্তদের সম্পর্কে কিছু সূত্র পাওয়া যায়। সেটি ছিল ওল্ড দিল্লি রেল স্টেশনের সকাল ১০টা ১৪ মিনিটের একটি ফুটেজ। সেই ফুটেজের মাধ্যমেই পরবর্তীতে প্রভু মাহাতো নামে এক অটোচালককে শনাক্ত করা হয়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩০ অক্টোবর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনায় বাকি দুই অভিযুক্ত হলেন প্রমোদ বাবু ও মহম্মদ শামসুল। তাঁদের যথাক্রমে গত ২ নভেম্বর এবং ৪ নভেম্বর গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের দাবি, জেরায় ইতিমধ্যেই দোষ কবুল করেছেন অভিযুক্তরা।