
লন্ডনে আন্তর্জাতিক শিল্প সম্মেলনে দাঁড়িয়ে বাংলায় বিনিয়োগের আহ্বান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
লন্ডনের সেন্ট জেমস কোর্ট হোটেলের এডওয়ার্ডিয়ান হলে এক আন্তর্জাতিক শিল্প সম্মেলনে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মবিশ্বাসী বার্তা। “বাংলায় বিনিয়োগ করুন ৷ কারণ শিল্প ও উদ্যোগপতিদের ডেস্টিনেশন এখন বাংলা” ৷ এভাবেই বাংলায় বিনিয়োগের জন্য ব্রিটেনে দাঁড়িয়ে বাঙালি ও অবাঙালি শিল্পপতিদের আহ্বান জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, “বাংলায় বিনিয়োগ করলে আপনি লাভবান হবেন, কারণ এখানে টেনশন নেই, স্ট্রেস নেই। শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নত পরিকাঠামো রয়েছে। ব্রিটেনের ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলা নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে।” ইউকে ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল, ফিকি এবং পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের প্রতিনিধিদের সামনে তিনি বাংলার অর্থনৈতিক অগ্রগতির পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, “ভারতে যখন জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬.৩৭ শতাংশ, তখন বাংলায় তা ৬.৮০ শতাংশ। গত কয়েক বছরে আমরা বেকারত্ব ৪৬ শতাংশ কমিয়ে এনেছি, যা দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে ৬টি নতুন ইকোনমিক করিডর তৈরি হচ্ছে ৷ যা শিল্পের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। পাশাপাশি, বীরভূমের দেউচ- পাচামিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা উত্তোলন শিল্প গড়ে উঠছে ৷ যা আগামী এক শতাব্দী পর্যন্ত রাজ্যের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। এখন আর লোডশেডিং হয় না। আগামিদিনে বিদ্যুতের খরচও কমবে, যা শিল্পের জন্য ইতিবাচক ৷ বাংলা ও ব্রিটেনের সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। লন্ডন আমাদের চেনে, আমাদের সংস্কৃতি বোঝে। তাই ব্যবসা ও বাণিজ্যের প্রসারে লন্ডনের সঙ্গে সরাসরি বিমান সংযোগ পুনঃস্থাপন প্রয়োজন।” এ বিষয়ে তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছে আহ্বান জানান। বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য তিনি ফুয়েল ট্যাক্স ফ্রি অ্যাডভান্টেজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। বাংলার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি তুলে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “২০২০১১ সালে বাংলায় যেখানে ১২টি মেডিক্যাল কলেজ ছিল, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩৮টি ৷ ৩২টি মাল্টি-সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে।” তিনি আরও জানান, ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের মাধ্যমে কম খরচে চিকিৎসার সুবিধা পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পর্যটনের প্রসারে দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিকের পাশাপাশি সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের কথা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো লড়াই করি ৷ বাংলা সবসময় এগিয়ে থাকে ৷” মুখ্যমন্ত্রী মহিলাদের ক্ষমতায়নের বিষয়টিও তুলে ধরেন। তিনি জানান, “আমার দলে ৩৯ শতাংশ মহিলা জনপ্রতিনিধি রয়েছেন ৷ যেখানে অনেক দল এখনও ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা করছে ৷ বাংলায় ৯৪টি সামাজিক প্রকল্প চলছে ৷ যা ছাত্র, কৃষক, মহিলা ও শ্রমজীবীদের সুরক্ষা দিচ্ছে।” এদিনের সম্মেলনে শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া, সত্যম ও ঋষি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরাও মমতার বক্তব্যের প্রশংসা করেন। লন্ডন-বাংলার শিল্প সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলেই আশা করছে বণিকমহল।