
ট্রেন চালানোর সময় খাওয়া এবং প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়াও যাবে না লোকো পাইলটদের
রেল যাত্রীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ছিলই। এবার প্রকাশ্যে এল কর্মীদের প্রতি রেলের ‘অমানবিক’ আচরণও। কারণ রেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবার থেকে কর্তব্যরত অবস্থায়, অর্থাৎ ট্রেন চালানোর সময় খাবার খেতে পারবেন না লোকো পাইলটরা। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়াও যাবে না। কর্তব্যরত অবস্থায় প্রস্রাবের বেগ এলে তা চেপে রাখতে হবে। ট্রেন চালক ও সহ-চালকদের বিভিন্ন ইস্যুতে ইতিপূর্বে একটি মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করেছিল রেল বোর্ড। গত ৪ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট কমিটি রেল বোর্ডের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের কমিটির যাবতীয় সুপারিশ মেনে নিয়ে রেলমন্ত্রক জানিয়েছে, কর্তব্যরত অবস্থায় লোকো পাইলটরা ‘মিল ব্রেক’ নিতে পারবেন না এবং ‘নেচারস কল’-এ সাড়া দেবেন না। কারণ, উল্লিখিত রিপোর্টে রেলের কমিটি এই প্রসঙ্গে জানিয়েছে, ‘নট অপারেশনালি ফিজিবল’। কেন এটি পরিচালনগতভাবে একেবারেই সম্ভবপর নয়, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। মধুমেহ রোগে আক্রান্ত ট্রেন চালক বা মহিলা লোকো পাইলটরা এর ফলে কতটা অসুবিধায় পড়বেন, সেই প্রশ্নও উঠছে। কারণ বহু ট্রেন রয়েছে, যেগুলি প্রায় ‘ওভারনাইট’ ননস্টপ চলে। লোকো পাইলটরা সেক্ষেত্রে চূড়ান্ত সমস্যার মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা। ইতিমধ্যে এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি সবক’টি জোনের জেনারেল ম্যানেজারের উদ্দেশে পাঠিয়েছে রেল বোর্ড। এহেন বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে রীতিমতো শোরগোল পড়েছে। প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে ট্রেন চালকদের সর্বভারতীয় সংগঠন। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখেছেন ‘অল ইন্ডিয়া লোকো রানিং স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সেক্রেটারি জেনারেল কে সি জেমস। এমনকী, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে ট্রেন চালকদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে। প্রতিবাদে সরব হয়েছে রেল কর্মীদের সর্বভারতীয় সংগঠনগুলিও। তুমুল বিতর্ক সত্ত্বেও বুধবার রাত পর্যন্ত সরকারিভাবে এনিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি রেল বোর্ড। ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩০ কিলোমিটার গতিতে ছুটে চলা মেল, এক্সপ্রেসগুলিকেই হাইস্পিড হিসেবে ধরতে হবে। আগে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার গতিতে ছুটলেই সংশ্লিষ্ট ট্রেনকে হাইস্পিডের তকমা দেওয়া হতো। প্রতি ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিতে ছুটে চলা ট্রেনের প্রতিটিতেই চালকের পাশাপাশি অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকো পাইলটকে (এএলপি) দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, ২০০ কিলোমিটার বা তার বেশি দূরত্ব পাড়ি দিলে ‘মেমু’ ট্রেনগুলিতে সহ-চালক রাখতেই হবে। পাইলট কেবিন বা লোকোমোটিভ ক্যাবে ক্রু ভয়েস অ্যান্ড ভিডিও রেকর্ডিং সিস্টেমে আপত্তি জানিয়েছিলেন ট্রেন চালকদের একটি বড় অংশ। তাও খারিজ করে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে কোনওরকম ‘ব্রিচ অব প্রাইভেসি’র সম্ভাবনা নেই।