
প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার মৃত্যুতে অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করল রাজ্য সরকার
প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। তাঁর প্রয়াণে শুক্রবার অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করল নবান্ন। সমস্ত সরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান, পুরসভা, সরকার পোষিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ দিন বেলা ২টোর পর থেকে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন রেজ্জাক মোল্লা। শুক্রবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং পূর্বের বাকড়ি গ্রামে নিজের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রায় ৫০ বছরের বিধায়ক ছিলেন রেজ্জাক মোল্লা। পোড় খাওয়া রাজনীতিক রেজ্জাক একাধিক মন্ত্রিসভার সদস্য থেকেছেন। বাম এবং তৃণমূল, দুই জমানাতেই তিনি মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। ক্যানিং পূর্ব বিধানসভার মিলনবাজারের কাছে বাকড়া গ্রামে রেজ্জাক মোল্লার পৈত্রিক ভিটে। গত চার-পাঁচ বছর ধরে সেখানেই চিকিৎসা চলছিল তাঁর। বার্ধক্যজনিত অসুখের সঙ্গে কিডনির অসুখে ভুগছিলেন। বছর তিনেক আগে শ্বাসকষ্ট ও কিডনির সমস্যার কারণে কলকাতার বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। যদিও সে সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। বামফ্রন্ট সরকারের ভূমি সংস্কার দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন রেজ্জাক মোল্লা। ২০১৬ সালে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়ে ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করে কৃষি বিপণন ও উদ্যানপালন দপ্তরের মন্ত্রী হন। সেই প্রাক্তন মন্ত্রীর প্রয়াণে শুক্রবার অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করল রাজ্য। উল্লেখ্য, 2011 সালে বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর সিপিআইএমের থেকে দূরত্ব তৈরি হয় আব্দুর রেজ্জাকের ৷ একাধিকবার দলবিরোধী মন্তব্য করে আলিমুদ্দিনের রোষের শিকার হন তিনি ৷ 2014 সালে তাঁকে বহিষ্কার করে সিপিআইএম ৷ এরপর মাঝে ভারতীয় ন্যায়বিচার পার্টি নামে একটি ছোট সংগঠনে যোগ দেন ৷ কিন্তু, সেখানেও বেশিদিন স্থায়ী হননি ৷ 2016 বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে যোগ দেন আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা ৷ সেবার ভাঙড় বিধানসভা থেকে তৃণমূলের টিকিট পান তিনি ৷ জয়ীও হন ৷তবে, দলবদলে জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি আব্দুর রেজ্জাকের ৷ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ থেকে রাজনৈতিক মহল, সর্বত্র তিনি বিরাজমান ছিলেন ৷ তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ রাজনৈতিক মহল ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শোকবার্তায় লিখেছেন, “আমার সহকর্মী, আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা’র প্রয়াণে আমি শোকাহত ও মর্মাহত ৷ তিনি রাজ্য মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী ছিলেন ৷ তাঁকে আমি শ্রদ্ধা করতাম, সম্মান করতাম ৷” তাঁর রাজনৈতিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নিয়ে মমতা লেখেন, “বাংলার গ্রামজীবন, কৃষি-অর্থনীতি ও ভূমি-সংস্কার বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ছিল সুবিদিত ৷ তাই একসময় অন্য ধারার রাজনীতি করলেও, মা-মাটি-মানুষের সরকারে তাঁর মিলিত হয়ে যাওয়া ছিল সহজ ও স্বাভাবিক ৷ তাঁর প্রয়াণে বাংলার রাজনৈতিক জীবনে অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হল ৷ আমি তাঁর পরিবারবর্গ, অসংখ্য অনুগামী ও শুভানুধ্যায়ীকে আন্তরিক সমবেদনা জানাই ৷” এখনও পর্যন্ত যা খবর, রাজ্যের প্রাক্তন এই মন্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দেহ বিধানসভায় নিয়ে আসা হতে পারে ৷ সেখানে প্রাক্তন সহকর্মী এবং রাজনৈতিক দলের সতীর্থরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন ৷ তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজ্য সরকারি অফিসগুলিতে আজ অর্ধদিবস (দুপুর 2টোয়) ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।