‘বাংলার বলে অন্য রাজ্যের ভিডিও দেখানো হচ্ছে, কিছু সংবাদমাধ্যম ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছেন’, ওয়াকফ অশান্তি নিয়ে ইমামদের বৈঠক থেকে বললেন মুখ্যমন্ত্রী

ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে রাজ্যে ছড়িয়ে পড়া অশান্তির রুখতে এবং রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে বুধবারা নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ইমাম এবং মোয়াজ্জেমদের নিয়ে বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “পরিস্থিতির চাপে ওয়াকফ নিয়ে কিছু অশান্তি হয়েছে। প্ররোচনামূলক কথা ছড়িয়েছে। মুর্শিদাবাদে হয়নি। মালদায় হয়েছে। ওটা কংগ্রেসের আসন। তৃণমূল যদি করতো তাহলে তৃণমূল সাংসদ, বিধায়কের বাড়িতে ভাঙচুর হত না। আমি উস্কানিমূলক কথা বলতে আসিনি। আমি শান্তি চাই।” বক্তৃতার শুরুতে এসএসসি চাকরি বাতিল নিয়ে বিরোধীদের তোপ দাগেন মমতা। তিনি বলেন, “আমার যেমন ক্ষমতা নেই কারও সম্পত্তির দখল করা। তেমনই আপনারও অধিকার নেই কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা ধর্মীয় সম্পত্তি দখল করা। আমরা অনেক সময় লড়াই করেছি আদালতে। ২৬ হাজার চাকরি একলপ্তে বাতিল করে দেওয়া হল। বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে।” এরপরেই বিজেপিকে তাঁর তোপ, “কতজনকে চাকরি দিয়েছেন, ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন, গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন, তেলের দাম বাড়িয়েছেন।” এরপরেই তোপ দাগেন নির্দিষ্ট কিছু সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন, “আপনারা ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছেন। বাইরে থেকে আসা কিছু সংবাদমাধ্যম ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছেন। আমরা সব ধরে নিয়েছি। আটটি ভিডিও ধরা পড়েছে। কোনওটিই বাংলার নয়। অন্য রাজ্যের সে সব।” ইমামদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমরা সর্বধর্ম সমন্বয়ে বিশ্বাসী। বাংলা স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্ম দিয়েছ।” করজোড়ে মমতার অনুরোধ, “বিজেপির কথায় অশান্তি করবেন না। যদি একটুও বিশ্বাস থাকে আমার উপর, অশান্তি করবেন না। প্রতিটি ধর্মের প্রতি সকলের শ্রদ্ধা থাকা উচিৎ। এটাই আমাদের পরম্পরা। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু স্বাধীনতার জন্য লড়েছেন। তাঁর কী হয়েছিল সেটা আমরা আজও জানতে পারিনি। ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইটের সময় গান্ধীজি কলকাতায় ছিলেন যাতে কোনও দাঙ্গা না হয়। স্বাধীনতার লড়াইয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন বাংলার মাটি বাংলার জল। ইকবাল গেয়েছেন, সারে জাহাঁ সে আচ্ছা, হিন্দুস্থান হামারা।” মমতার আরও অভিযোগ,  ”বিজেপি এজেন্সির মাধ্যমে বাইরে থেকে লোক ঢুকিয়ে অশান্তি তৈরি করা হচ্ছে। রামনবমীতে পরিকল্পনা ছিল দাঙ্গা বাঁধানোর।কিন্তু আপনারা সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ করে শান্তি বজায় রেখেছেন। এর জন্য ধন্যবাদ আপনাদের। মনে রাখবেন, ওরা ওয়াকফ নিয়েও অশান্তি করার চেষ্টা করবে। রুখে দিন।” সংবিধান মনে করিয়ে দিয়ে মমতা বলেন, “সংবিধানের ২৬ ধারায় নিজস্ব ধর্ম পালনের স্বাধীনতা এবং সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার সকলের রয়েছে। আপনি সবার অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন। এটি আপনার এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। কেন্দ্রকে বলছি, কেন এত তাড়াহুড়ো। আপনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানেন না। আপনাদের প্ল্যানিং কী? এজেন্সির মাধ্যমে বাইরে থেকে লোক এনে অশান্তি তৈরি করা। এএনআইয়ের টুইটে দেখছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সূত্রের রিপোর্ট বলছে, বাংলায় অশান্তির পিছনে বাংলাদেশের দুষ্কৃতীদের হাত রয়েছে। কিন্তু বাংলা তো সীমানা সামলায় না। কেন্দ্র সামলায়। তাহলে কার দায় সেটা। বিএসএফ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে কাজ করে। আমাদের কী দোষ? আপনার বিএসএফ কেন ঢুকতে দিল?” বিজেপির উদ্দেশ্যে মমতার বার্তা, “সমাজে বিভেদ তৈরি করবেন না। হিন্দুস্থানকে টুকরো করবেন না।” এপরেই সরাসরি অমিত শাহকে আক্রমণ করে বলেন, “স্বারাষ্টমন্ত্রক যদি কালিদাসের মতো যেই ডালে বসে আছেন সেই ডাল কাটেন তাহলে বলতেই হবে। এত তাড়া কীসের। মোদীজি চলে গেলে আপনি তো প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। মোদিজি কে অনুরোধ ওঁনাকে সামলান। সব এজেন্সি ওঁনার হাতে দিয়ে রেখেছেন। সর্বভারতীয ভারতীয় জোট ইন্ডিয়া এতসঙ্গে লড়াই করার ডাক দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, “ইন্ডিয়া টিমকে বলছি লেট আস টুগেদার ফাইট বোল্ডলি। আজকে আপনাদের বিরুদ্ধে করছে কাল অন্য কেউ।” এরপরেই তুলোধনা করেন বিজেপির জোট সঙ্গী চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলেগু দেশ পার্টি এবং নীতিশ কুমারের জেডিইউ-কে। তিনি বলেন, “এখন কী আপনাদের গরিষ্ঠতা আছে? তাও এরকম করছেন। চন্দ্রবাবু নায়ডু, নীতিশ কুমার চুপ করে রয়েছেন। আপনারা এদের ভোট দেন। শুধুমাত্র একটু ক্ষমতার লোভে ওঁনারা চুপ করে রয়েছেন।”মমতার আশ্বাস, “আমি যতক্ষণ থাকব, হিন্দু-মুসলাম বিভেদ করতে দেব না। যদি আমার উপর ভরসা থাকে তো দয়া করে অশান্তি করবেন না। বিজেপির প্ররোচনায় পা দেবেন না। ইমামদের অনুরোধ আপনাদের অনেক দায়িত্ব। আমি তদন্ত করে দেখব, বিএসএফ কী করছে। কাকে টাকা দিয়ে ইট ছোঁড়ানো হয়েছে। টুইট করানো হয়েছে। এর দায় কার। প্লেনে কারা আসছে, ট্রেনে কারা আসছে সেই তথ্য দেন না।”  ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে কোন পথে লড়তে হবে? এদিনের অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকে তা বুঝিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এলাকায় শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিয়ে তিনি বললেন, “বাংলায় আন্দোলন করে লাভ নেই, দিল্লিতে করুন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চান, রাষ্ট্রপতির কাছে সময় চান। অ্যাপয়ন্টমেন্ট নিয়ে কথা বলুন।”এরপরেই সবধর্মের প্রতিনিধিদের মঞ্চে ডেকে নিয়ে সম্প্রীতির বার্তা দেন মমতা।

error: Content is protected !!