মুর্শিদাবাদ তাণ্ডবে চিহ্নিত ৩৫ সন্ত্রাসী!

 ওয়াকফ আন্দোলনকে ‘শিখণ্ডী’ করে যারা সামশেরগঞ্জ, সূতি ও ধুলিয়ানের বিস্তীর্ণ অংশে হিংসা ছড়িয়েছিল, সেই ‘সন্ত্রাসী’দের চিহ্নিত করার কাজ পুরোদমে শুরু করে দিয়েছে সিট। সীমান্তের ওপার থেকে জেলভাঙা বন্দিদের প্রত্যক্ষ ইন্ধন থাকলেও স্থানীয় যে কিশোরদের এই হাঙ্গামায় সামনের সারিতে রাখা হয়েছিল, তারা চলে এসেছে তদন্তকারী অফিসারদের স্ক্যানারে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই ‘অপারেশন স্কোয়াডে’র ৩৫ জনকে এ পর্যন্ত চিহ্নিত করা হয়েছে বলে খবর। এছাড়াও ফুটেজে যে সব বহিরাগতর ছবি ধরা পড়েছে, তাদের নাম পরিচয় জানারও চেষ্টা চলছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক বিক্ষোভ-কর্মসূচিকে ব্যবহার করেই মুর্শিদাবাদে আগুন জ্বালানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। সিট তদন্তে নেমে জেনেছে, সংশোধনী বিল সংসদে আনার  আগে থেকেই একাধিক ক্লোজড ইউজার গ্রুপ তৈরি হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলার বিভিন্ন এলাকার ‘মাতব্বর’দের। তারা এলাকার বিভিন্ন অনুমোদনহীন মাদ্রাসার পড়ুয়া ও শিক্ষকদের গ্রুপে যোগ করে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে চলা এই গ্রুপের কোনওটার নাম ছিল ‘জেহাদ’, আবার কোনটার ‘বিপ্লব’। তদন্তকারীরা যাতে চিহ্নিত করতে না পারেন, তাই ভুয়ো নথি দিয়ে তোলা সিম কার্ড ব্যবহার করে এই গ্রুপগুলি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে খোলা হয়। এক একটি গ্রুপে ৩০ থেকে ৪০ জন মেম্বার ছিল। অ্যাডমিন হিসেবে যারা ছিল, তাদের কয়েকজনের নম্বর আবার ছিল বাংলাদেশের। তার থেকেই তদন্তকারীরা নিশ্চিত, গ্রুপগুলি ছিল বাংলাদেশের কট্টরপন্থীদের নিয়ন্ত্রণেই। ভিপিএন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিমগুলির লোকেশন পর্যন্ত বদলানো হয়েছে। যাতে দেখলে মনে হবে মুর্শিদাবাদ নয়, বিদেশে বসে এই গ্রুপগুলি চালানো হচ্ছিল। গ্রুপের অ্যাডমিনরা বারবার প্ররোচনামূলক বিষয়গুলো তুলে ধরেছে। লাগাতার চলেছে মগজ ধোলাই। এই বিলের কোন কোন দিক সংবিধান বিরোধী বা আইনগত উপায়ে কীভাবে সরকারের মোকাবিলা করা যায়, সে বিষয়ে গ্রুপে কোনও আলোচনাই হয়নি। বরং পুলিসকে কোথায় কীভাবে আটকানো হবে, পাথর-বোমা কোথায় মজুত থাকবে, সে নিয়ে একাধিক কথাবার্তা হয়েছে। কোন কোন টিমে কারা অপারেশন করবে, সেই সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে গ্রুপে। সেখান থেকেই সিটের সদস্যরা নিশ্চিত, হামলার ঘটনা পরিকল্পিত। গ্রুপের কোন কোন সদস্য হাঙ্গামায় ছিল, সেটা আলাদা করতে শুরু করে সিট। বিভিন্ন দোকান, শপিং মল এবং রাস্তার ট্রাফিক সিগন্যালে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে সেগুলি বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখেন, একদল লোক জড়ো হচ্ছে। আর এক পক্ষ হিংসার জন্য পাথর, বোমা ও সিলিন্ডার নিয়ে আসছে। তারপর ‘অপারেশন স্কোয়াডে’ থাকা সদস্যরা পাথর ও বোমা ছুড়ছে পুলিসকে লক্ষ্য করে। সেইসঙ্গে তারা আগুন দিচ্ছে পুলিসের গাড়িতে। বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পড়ছে একদল লোক, তারা সিলিন্ডার থেকে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। ভাঙচুর, লুটপাট চালাচ্ছে। সেখান থেকেই এমন ৩৫ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা সরাসরি অপারেশনে জড়িত। তাদের খোঁজ চলছে। 

error: Content is protected !!