‘বিরোধীদের উপর পেগাসাস, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নয় কেন?’ কেন্দ্রীয় সরকারে তোপ অভিষেকের

২২ এপ্রিল রক্তাক্ত হয় ভূস্বর্গ। ২৬ জনকে খুন করে জঙ্গিরা। তারপর কেটে গিয়েছে ৫৫ দিন। এখনও ধরা পড়েনি কোনও আততায়ী। সীমান্ত পেরিয়ে কী ভাবে ঢুকল তারা? গোয়েন্দাদের কাছে কি কোনও খবর ছিল না? সোমবার X হ্যান্ডলে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে এমনই পাঁচ প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পহেলগাম হামলার পরেও বিশ্বব্যাঙ্কের কাছ থেকে পাকিস্তানের ৪০ বিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য পাওয়াকে ভারতের কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলে মনে করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রথম প্রশ্ন

সীমান্ত টপকে  জঙ্গিরা ভারতের মাটিতে ঢুকল, তারপর হামলা চালাল এবং পালিয়ে গেল। কিন্তু ‘কী ভাবে তারা ঢুকল?’ এই প্রশ্নই তুলেছেন অভিষেক। তিনি লিখেছেন, ‘এই বিশাল নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য দায়ী কে? কে এর জবাবদিহি করবে?’

দ্বিতীয় প্রশ্ন

পহেলগামের জঙ্গি হামলাকে গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, ঘটনার একমাস পরেই IB প্রধানের এক বছরের মেয়াদ বৃদ্ধি করে কেন্দ্রীয় সরকার। অভিষেকের প্রশ্ন, ‘এটা কী ব্যর্থতার পর পুরস্কার—এর কারণ কী? বাধ্যবাধকতা কী?’ জঙ্গি ও সন্দেহভাজনদের উপর কেন পেগাসাস নয়, সেই প্রশ্ন তুলে লিখেছেন, ‘সরকার যদি PEGASUS স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে বিরোধী নেতা (আমিও তার মধ্যে একজন), সাংবাদিক এবং বিচারপতিদের উপর নজরদারি চালাতে পারে, তাহলে সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ক ও সন্দেহভাজনদের উপর এই প্রযুক্তি প্রয়োগে বাধা কোথায়?’

তৃতীয় প্রশ্ন

হামলার পর প্রায় ২ মাস কাটতে চলল। কিন্তু জঙ্গিরা এখনও অধরা। তারা এখন কোথায় ? জানতে চেয়েছেন অভিষেক। লিখেছেন, ‘এই নারকীয় হামলার জন্য দায়ী চার সন্ত্রাসবাদী এখন কোথায়? তারা কি মারা গেছে, না বেঁচে আছে? যদি তারা নিহত হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার এই নিয়ে স্পষ্ট বিবৃতি দিচ্ছে না কেন? আর যদি না হয়ে থাকে, তবে চুপ করে বসে আছে কেন?’

চতুর্থ প্রশ্ন

অপারেশন সিঁদুর ও সন্ত্রাস দমনে ভারতের পদক্ষেপ নিয়ে সর্বদলীয় সংসদীয় দলের প্রতিনিধি হয়ে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কথা বলেন সে দেশের সরকার এবং প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে। প্রতিটি বৈঠক এবং আলোচনাসভাতেই পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দেন তিনি। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, পাকিস্তানের সঙ্গে এখন শুধু মাত্র পাক-অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েই কথা হতে পারে। এ দিন X পোস্টেও অভিষেক জানতে চান, ভারত কবে PoK পুনরুদ্ধার করবে? ৭ মে পহেলগামের পাল্টা অপারেশন সিঁদুর শুরু করেছিল ভারত। ১০ মে সংঘর্ষবিরতি হয়। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তাঁর কথাতেই দুই দেশ সংঘর্ষবিরতে রাজি হয়েছে। অভিষেকের প্রশ্ন, ‘বাণিজ্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংঘর্ষবিরতি, এই নিয়ে কেন কেন্দ্রীয় সরকার এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি? সারা দেশ যখন একসঙ্গে দাঁড়িয়েছিল, তখন কেন ভারতবাসীর আবেগকে অবজ্ঞা করা হলো?’

পঞ্চম প্রশ্ন

সর্বদলীয় সংসদীয় দল ৩৩টি দেশে ঘুরেছে। অভিষেকের প্রশ্ন, ‘কটি দে’শ খোলাখুলিভাবে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে?’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘বিশ্বগুরু’ হয়ে ওঠার দাবিকেও একহাত নিয়ে লিখেছেন, ‘আমরা সত্যিই বিশ্বগুরু হই, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে থাকি, তাহলে পহেলগামের ঠিক পরেই IMF কী করে পাকিস্তানকে ১ বিলিয়ন এবং বিশ্বব্যাঙ্ক ৪০ বিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য করল? যে দেশ বারবার সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাস ছড়ায়, তারা কীভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়?’  শেষে একটি টিপ্পনিও জুড়ে  দিয়েছেন তিনি। গত ১০ বছরে বিদেশমন্ত্রকের পিছনে ২,০০,০০০ কোটি টাকা (দুই লক্ষ কোটি) খরচ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সে কথা জানিয়ে অভিষেক লিখেছেন, ‘এই প্রশাসনের থেকে আমরা চাই স্বচ্ছতা, দায়িত্ববোধ আর ফলাফল।’ শেষে লিখেছেন, ‘গোটা দেশ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে চায়।’
error: Content is protected !!