‘সিঁদুরের অপমানের জবাব দেবেন মা-বোনেরা’, মমতাকে ফের ২০২৬-এর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েন অমিত শাহ

সংখ্যালঘু তোষামোদ, দুর্নীতি, নারী নির্যাতন ও বাংলার মানুষের প্রতি বঞ্চনা নিয়ে ‘মমতা বিরোধিতা’ই 2026 বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচারের হাতিয়ার হতে চলেছে ৷ রবিবার নেতাজি ইন্ডোরে বিজেপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভায় সেই বার্তাই দিয়ে গেলেন অমিত শাহ ৷ ‘অপারেশন সিঁদুর’ থেকে সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা, তৃণমূলকে সংখ্যালঘু তোষামোদের রাজনীতির অভিযোগে বিঁধলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৷ সেই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর চ্যালেঞ্জ, 2026 বিধানসভা নির্বাচনে হিংসা, রিগিং ছেড়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোটের ময়দানে নামুক তৃণমূল ৷ আর সেটা হলে, স্বয়ং মমতার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে বলে দাবি করলেন শাহ ৷ উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আলিপুরদুয়ারে সরকারি কর্মসূচি ও জনসভার জন্য এসেছিলেন ৷ মোদির সেই সফরে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে ভাষণকে কটাক্ষ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ ‘সিঁদুর বেচতে’ এসেছেন বলে কটাক্ষ করেছিলেন মমতা ৷ যার পালটা জবাব দিলেন অমিত শাহ ৷ এ দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কিছুদিন আগে কাশ্মীরে পাকিস্তানের পাঠানো জঙ্গিরা পর্যটকদের ধর্ম জিজ্ঞেস করে-করে, পরিবারের সামনে খুন করেছে ৷ তার জবাব দিতে মোদিজি ‘অপারেশন সিঁদুর’ করেছে ৷ পাকিস্তানের 100 কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে সন্ত্রাসবাদীদের মেরেছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ৷ কিন্তু, মমতা দিদির তাতে পেটে ব্যাথা শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ মোদিজিকে আক্রমণ করতে গিয়ে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে কুৎসিত মন্তব্য করেছেন তিনি ৷” এ প্রসঙ্গেই মমতার বিরুদ্ধে ‘তোষামোদে’র রাজনীতির অভিযোগ করলেন শাহ ৷ তাঁর কথায়, “তোষামোদের রাজনীতি করতে গিয়ে মমতা দিদি এতটাই নীচে নেমে গেছেন, যে সব সীমা লঙ্ঘন করেছেন, নোংরা রাজনৈতিক মন্তব্য করেছেন ৷ তিনি দেশের মা-বোনেদের সিঁদুরকেও অপমান করতে ছাড়েননি ৷ সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংককে খুশি করতে গিয়ে, মা-বোনেদের সিথির সিঁদুর মুছে দেওয়া জঙ্গিদের খতম করতে মোদিজি যে ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান চালিয়েছে, তারও বিরোধিতা করতে নেমেছেন তিনি ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই সিঁদুরের অপমানের জবাব 2026-এর বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার মা-বোনেরা দিয়ে দেবেন ৷” এ দিনের কর্মিসভা থেকে মমতার উদ্দেশে স্বচ্ছ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন অমিত শাহ ৷ নির্বাচনী হিংসার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “প্রতি নির্বাচনের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের গুন্ডারা বিজেপির কর্মীদের উপর হামলা চালায় ৷ এভাবে কয়েক হাজার বিজেপি কর্মীকে বাংলায় খুন করেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা ৷ সেই সঙ্গে দেদার ভোটলুট করে মমতা দিদির ‘ভাই’য়েরা ৷” শাহ’র কথায়, “আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ করছি ৷ সাহস থাকলে আপনি এই নির্বাচন হিংসা, রিগিং ছাড়া স্বচ্ছভাবে করে দেখান ৷ ঠিকঠাক ভোট হলে, মানুষ ভোট দিতে পারলে আপনার নিজের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে ৷” সংশোধিত ওয়াকফ আইনকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদ ও মালদায় হওয়া হিংসার ঘটনার প্রসঙ্গ উঠে আসে অমিত শাহের কথায় ৷ সেখানেও সংখ্যালঘু তোষামোদের অভিযোগ করেছেন তিনি ৷ মুর্শিদাবাদের ঘটনাকে ‘রাজ্য সরকারের মদতে হওয়া হিংসা’ বলে কটাক্ষ করেছেন শাহ ৷ তাঁর কথায়, “কেন্দ্র ওয়াকফ সংশোধন করে নতুন আইন এনেছে ৷ কেন বাংলার জমির ওয়াকফের দখলে যাবে ৷ বাংলার জমির অধিকার বাংলার সব মানুষের ৷ তাই ওয়াকফ বোর্ডকে স্বচ্ছ করতে আইনে সংশোধন করা হয়েছে ৷ এখানেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের তোষণ করতে সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা শুরু করেন ৷” অমিত শাহ অভিযোগ করেন, “মুর্শিদাবাদে হিন্দুদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, আগুন জ্বালানো হয়েছে ৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বারবার বলেছিল জেলায় থাকা বিএসএফ-কে নামাতে ৷ রাজ্য সরকার রাজি হয়নি ৷ পরে আমাদের নেতারা হাইকোর্টে গিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ নিয়ে আসে ৷ তারপর হিন্দুদের ঘরবাড়ি বাঁচানো সম্ভব হয়েছে ৷ মমতার মন্ত্রীরা দাঁড়িয়ে থেকে সেই হিংসায় মদত দিয়েছেন ৷ আমি এখানে দাঁড়িয়ে বলে যাচ্ছি, এই ঘটনা পুরোপুরি ‘রাজ্য সরকারের মদতে হওয়া হিংসা’ ছিল ৷” অনুপ্রবেশ নিয়েও তৃণমূলকে এ দিন নিশানা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৷ শাসকদল বারেবারে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ সীমান্ত বিএসএফের অধীনে ৷ তাহলে কেন বিএসএফ অনুপ্রবেশ রুখতে পারছে না ৷ সেই প্রসঙ্গ তুলে শাহ বলেন, “বাংলার নির্বাচন দেশের সুরক্ষার সঙ্গে জড়িত ৷ মমতা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের জন্য সীমান্তকে খুলে রেখে দিয়েছে ৷ তৃণমূলের সাংসদরা সংসদে গিয়ে আমাকে প্রশ্ন করে বিএসএফ কী করছে ৷ আমি বলি, বিএসএফের হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক রাজ্যের কাছে 50 কিলোমিটার পর্যন্ত জমি চেয়েছিল ৷ রাজ্য সরকার সেটা দেয়নি ৷ সেই জমি দিলে এতদিনে অনুপ্রবেশকে গোড়া থেকে উপড়ে ফেলত বিএসএফ ৷ কিন্তু, মমতা সেটা চান না ৷ বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের ঢুকিয়ে ভোট ব্যাংক বাড়াচ্ছে ৷” এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু শরণার্থীদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ করেন অমিত শাহ ৷ তিনি বলেন, “আমার কাছে বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর এসেছিলেন ৷ উনি বলছিলেন, বাংলাদেশ থেকে যে শরণার্থীরা ভারতে এসে ভোটাধিকার পেয়েছেন, তাঁদের ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার নোটিশ পাঠানো হয়েছে ৷ আমি শান্তনুকে বলেছি, ওই শরণার্থীদের সিএএ-র নাগরিকত্বের আবেদনপত্র পূরণ করাতে বলেছিল ৷ কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের নাগরকিত্ব দিয়ে দেবে ৷ তখন কেউ ওঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে পারবে না ৷” এ প্রসঙ্গে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় নিহত কলকাতার বিতান অধিকারীর স্ত্রী সোহিনী অধিকারীকে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন শাহ ৷ জানান, নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা সোহিনী এবং তাঁর পরিবারকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আবেদন করার একমাসের মধ্যে ভারতের নাগরিকত্ব দিয়েছে সিএএ-র আওতায় ৷ 2016-র এসএসসি-র পুরো প্যানেল বাতিল হওয়া নিয়েও রাজ্য সরকারকে বিঁধেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, “মমতার সরকারের দুর্নীতি এতটাই বিশাল যে, সেখান থেকে শিক্ষকরাও রেহাই পায়নি ৷ এসএসসি-র শিক্ষকরা চাকরি হারিয়ে রাস্তায় বসে আছেন ৷ আজকে বাংলার যুবক-যুবতীদের চাকরি কলকাতার রাস্তায় বিক্রি হচ্ছে ৷ সেই সঙ্গে, পশুপাচার, কয়লাপাচার, পুরসভার দুর্নীতি, গোর্খা টেরিটোরিয়াল বোর্ডের উন্নয়নের টাকাও লুট করেছে ৷” আর এই সব ইস্যুকে 2026 বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলার প্রতিটি মানুষের কাছে তুলে ধরার বার্তা দিলেন অমিত শাহ ৷

error: Content is protected !!