
১২ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণ, ধৃত ৬৫-র বৃদ্ধ, উত্তপ্ত নৈনিতাল
নৈনিতালে নাবালিকাকে ধর্ষণে জের। পর্যটনের ভরা মরশুমে ঝাঁকে ঝাঁকে হোটেল বুকিং বাতিলের হিড়িক। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও হিন্দুত্ববাদী কিছু সংগঠন গভীর রাত পর্যন্ত মসজিদে ভাঙচুর চালায় ও পাথর নিক্ষেপ করে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এই খবর লেখা পর্যন্ত পুলিশ এই ঘটনায় মামলা রুজু করে উসমান নামে অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়েছে। এই ধৃতের বয়স ৬৫ বছর। মল্লিতাল ও তার আশেপাশে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, ১২ বছরের এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ৬৫ বছরের ভিনধর্মী বৃদ্ধের বিরুদ্ধে। তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তবে এলাকাবাসীর রোষের আগুনে জ্বলছে গোটা শহর। তারই কোপ পড়েছে পর্যটনে। উত্তরাখণ্ডের এই শৈলশহরে বর্তমানে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হোটেল মালিক থেকে শুরু করে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যবসায়ীরা। এমনিতেই পহেলগাঁও হামলা ঘিরে দেশের অন্যতম পর্যটনস্থল কাশ্মীরে মানুষের আনাগোনা এক ধাক্কায় কমতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় আরও এক জনপ্রিয় আকর্ষণ নৈনিতালে কিশোরীকে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা গোটা এলাকায় বিদ্বেষের বীজ বুনতে শুরু করেছে। পুলিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গোটা নৈনিতাল কার্যত বন্ধ পালন করেছে। জানা গিয়েছে, এদিন তাল্লিতাল থেকে মাল্লিতাল পর্যন্ত সব দোকানই বন্ধ ছিল। এমনকী রাস্তার ঠেলাওয়ালারাও এই বন্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শামিল হন। ওই চত্বরে রিকশ পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় পর্যটকরা সমস্যায় পড়েন। তাঁদের হোটেলে বসেই দিন কাটাতে হয়। যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেই কারণে নৈনিতালের নানা এলাকায় বিশাল পুলিস বাহিনী মোতায়েন ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এলাকাবাসী জানান, কাশ্মীরের ঘটনা নিয়ে এমনিতেই নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের প্রতি মানুষের চাপা উত্তেজনা রয়েছে। তার উপর নাবালিকার উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় এখানকার পরিস্থিতি আরও বিগড়ে গিয়েছে। পুলিস সূত্রে খবর, কিশোরী ধর্ষণে অভিযুক্ত বৃদ্ধের নাম উসমান। বুধবারই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার সংশ্লিষ্ট ধারা ও পকসো আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। বুধবার রাতেই স্থানীয় থানার সামনে বেশ কয়েকটি হিন্দু সংগঠন বিক্ষোভে শামিল হয়। এলাকার বেশ কয়েকটি দোকানও ভাংচুরও করা হয়। রাতের সেই ঘটনাই ধীরে ধীরে শহরের অন্য প্রান্তে চাপা উত্তেজনায় কার্যত অগ্নি সংযোগ করে। জেলাশাসক বরুণা আগরওয়াল জানান, যারা অশান্তি ছড়াতে চাইবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই অভিযুক্তের বাড়ির বাইরে বাড়তি নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের যে পরিযায়ী শ্রমিক এলাকায় কাজের জন্য এসেছিলেন, তাঁদেরও নিরাপদে অন্যত্র পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে। নৈনিতাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দিগ্বিজয় সিং বিস্ত বলেন, ‘এই ঘটনায় পর্যটন ব্যবসা ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বহু অনলাইন বুকিং বাতিল হয়েছে। এরকম চলতে থাকলে পর্যটন মরশুমে আমাদের যে কত বড় লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে সেটা বোঝানো যাব না।’