বদলা নিতে পারল না ভার, ষষ্ঠবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া
ভারত: ২৪০ (কেএল রাহুল ৬৬, বিরাট ৫৪, রোহিত ৪৭, স্টার্ক ৩/৫৫, প্যাট কামিন্স ২/৩৪, হ্যাজেলউড ২/৬০)
অস্ট্রেলিয়া: (ট্রাভিস হেড ১৩৭, লাবুশানে ৫৮*, বুমরাহ ২/৪৩, শামি ১/৪৭)
অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটে জয়ী
২০ বছর আগের বদলা নিতে পারল না ভারত। ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারত খেলেছিল রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। সেবার ফাইনালে ভারত হেরেছিল ১২৫ রানে। রোহিতদের সামনে সুযোগ ছিল মধুর প্রতিশোধ নেওয়ার। বদলাল না ইতিহাস। আহমেদাবাদে অধরা ‘বদলাপুর’। স্বপ্নভঙ্গ, আবার বছর ২০ পর, ফাইনালে ভারত হেরে গেল ছয় উইকেটে। বিশ্বসেরা সেই অস্ট্রেলিয়া। ১ লক্ষ ৩০ হাজার দর্শকের প্রবল শব্দব্রহ্ম মিলিয়ে গেল রবির নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে! চলতি কাপযুদ্ধের সেমিফাইনাল পর্যন্ত ভারতের যে পারফরম্য়ান্স ছিল, সেই পারফরম্য়ান্সটাই পুরোপুরি উবে গেল ফাইনালে। টানা ১০ ম্য়াচ জেতা দলের অন্তিম পর্বেই ঘটে গেল চরম ভরাডুবি। কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্য়াট কামিন্সরা কাপ নিয়ে গেলেন রোহিত শর্মাদের হাত থেকে। ১৪০ কোটি ভারতবাসীর বুক ভেঙে দু’টুকরো হল। আইসিসি ট্রফির সঙ্গে ভারতের দূরত্ব আরও বাড়ল। ২০১৩ সালে ভারতের শেষ আইসিসি ট্রফি, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিই। কপিল দেব, মহেন্দ্র সিং ধোনির আসনে বসা হল না রোহিতের। পুরো বিশ্বকাপেই চর্চায় ছিল ভারতের ব্য়াটিং-বোলিং-ফিল্ডিং। এই তিন বিভাগেই এদিন ভারতকে দেখাল নিস্প্রভ। এদিন টস জিতে কামিন্স প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যা দেখে অনেকেই চমকেছিল। কামিন্স বলেছিলেন ‘উইকেট দেখে শুষ্কই মনে হচ্ছে, আমরা প্রথমে বল করব। শিশির একটা ফ্য়াক্টর। রাতের দিকে এই মাঠে বেশ শিশির পড়ে। এই দলের অংশ হওয়া সত্য়িই গর্বের। টুর্নামেন্টের শুরুটা কিছুটা কঠিন হয়েছিল। কিন্তু এর পর থেকে কোথাও ভুল ভাবে পা পড়েনি। সেমি-ফাইনালের দলই ধরে রাখলাম আমরা।’ রোহিত বলেছিলেন, ‘আমি টস জিতলেও প্রথমেই ব্য়াট করতাম। বড় ম্য়াচে বোর্ডে বড় রান করতে হবে। দারুণ কিছু হতে চলেছে এই বিরাট ক্রিকেটীয় উৎসবে। আমাদের শান্ত থাকতে হবে। গতকাল সাংবাদিক বৈঠকেও বলেছি যে, ভারত অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে পারা স্বপ্নের মতো। আমরাও দল বদলালাম না।’ সত্য়িই কামিন্স অ্য়ান্ড কোং ভুল পা ফেললেন না। একেবারে মেপে খেলে, ভারতকে ছকে নিল। অজি বোলারদের সামনে শুধুমাত্র বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারলেন রোহিত (৩১ বলে ৪৭), বিরাট (৬৩ বলে ৫৪), কেএল রাহুল (১০৭ বলে ৬৬)। এই তিন ব্যাটার দাঁড়িয়েও কোন লাভ হল না। শুভমন ফাইনালে যেভাবে উইকেট ছুড়ে দিলেন বা শ্রেয়স যেভাবে আউট হলেন, তারপর ভারতের ব্য়াটিং নিয়ে আর কিছু বলার মতোই থাকল না। রবীন্দ্র জাদেজা (৯) ও সূর্যকুমার যাদবও (১৮) এদিন কিছুই করতে পারলেন না। ভারত লড়াই করে এবং ধুঁকতে ধুঁকতে মাত্র ২৪০ রান তুলতে পেরেছিল স্কোরবোর্ডে। অজি বোলারদেরই শুধু কৃতিত্ব প্রাপ্য় নয়। কৃতিত্ব সকলেরই। কারণ যে ফিল্ডিং অস্ট্রেলিয়া করে দেখাল, তা ইতিহাসের দলিল হয়ে থাকল। দেখে মনে হচ্ছিল, ১০ জন নয় ২০ জন বল রুখছেন মাঠে। এদিন স্টার্ক তিনটি উইকেট নিলেন। কামিন্স, হ্য়াজেলউড নিলেন দু’টি করে উইকেট। একটি করে উইকেট ম্য়াক্সওয়েল ও জাাম্পার। এই রান করে অস্ট্রেলিয়াকে বেঁধে রাখার স্বপ্ন দেখেছিলেন অনেকে। কিন্তু ক্রিকেট বড়ই নিষ্ঠুর। এখানে আবেগ নয়, গতিবেগ কাজ করে। আর সেই গতিবেগের জোরেই অস্ট্রেলিয়া বেরিয়ে গেল। বল করতে নেমে ভারতও কিন্তু আশা জাগিয়েছিল দারুণ ভাবে। ৫০ রানের মধ্য়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম তিন উইকেট তুলে নিয়েছিলেন মহম্মদ শামি ও জসপ্রীত বুমরারা। ডেভিড ওয়ার্নার (৭), মিচেল মার্শ (১৫) ও স্টিভ স্মিথ (৪) ফিরে যান। তবে দলের ওই প্রাথমিক চাপ ফুৎকারে উড়িয়ে দেন ট্র্য়াভিস হেড ও মার্নাস লাবুশেন। তাঁদের যুগলবন্দিই অস্ট্রেলিয়াকে ষষ্ঠবারের জন্য় এনে দিল বিশ্বকাপ। ২১৫ বলে ১৯২ রান তাঁরা তুলে দেন স্কোরবোর্ডে। ১২০ বলে ১৩৭ রান করে আউট হন হেড। লাবুশেন ১১০ বলে ৫৮ রানে থাকলেন অপরাজিত। গ্লেন ম্য়াক্সওয়েল মাঠে নেমে নিলেন উইনিং স্ট্রোক। ৪২ বল হাতে রাখে অস্ট্রেলিয়া হেসে খেলে ফাইনাল জিতে নেয়। এদিন শামি একটি ও বুমরা নেন দু’টি উইকেট।