‘কেউ টাকা চাইলে দেবেন না, টাকা চাইলে সরাসরি অভিযোগ জানান’, শিল্পপতিদের স্পষ্ট বার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের পর শিল্পোন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করতে সোমবার নবান্নে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এদিন শিল্পপতিদের উদ্দেশে তিনি স্পষ্ট বার্তা দিয়ে বলেন, “শিল্প করতে গেলে কেউ যদি টাকা চায়, দেবেন না ৷ সরকার কাজ করলে কারও থেকে কিছু নেয় না ৷ কেউ টাকা চাইলে সরাসরি অভিযোগ জানান ৷” তাঁর এই বক্তব্যে শিল্প ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত স্পষ্ট ৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “রেলমন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। এত বড় দফতর হাতে ছিল । আজ কেউ একটা কথাও বলতে পারবে না। কেউ টাকা চাইলে সরাসরি আমাকে জানান ।” একই সঙ্গে, তাঁর সংযোজন, “মানুষ ভালোবেসে পার্টিকে কিছু দিতে চাইলেও তাঁর আলাদা সিস্টেম রয়েছে ৷ চেকের সাহায্যে পার্টিকে দিতেই পারে ৷” দলের কিছু কিছু শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ৷ মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়ে দেন, হলদিয়া, দুর্গাপুর-সহ কয়েকটি জায়গায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র নেতৃত্বে বদল করা হবে ৷ তিনি পুলিশকেও পরামর্শ দিয়েছেন শিল্পাঞ্চলে ঘটে চলা এই বিষয়গুলি দেখতে ৷ পুলিশে আলাদা করে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে বলেও মনে করেন মমতা ৷ শুধু টাকা দেওয়া নিয়ে নয়, এদিন শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা করতেও কড়া অবস্থান নেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি স্পষ্ট করেন, কোনও প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের হঠাৎ ছাঁটাই করতে পারবে না ৷ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ৷ শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে এই বিষয়ে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ একইসঙ্গে, ট্রেড ইউনিয়নগুলিকেও সংযত থাকার বার্তা দেন তিনি ৷ এই বৈঠকে শিল্পের প্রসারে জমির সমস্যার দিকেও নজর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি জানান, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তিন হাজার একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে, যা শিল্পের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে ৷ সরকারি বিভিন্ন দফতরের কাছে থাকা অব্যবহৃত জমি সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে এবং তিন দিনের মধ্যে তার রিপোর্ট জমা দিতে হবে ৷ একইসঙ্গে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জন্য থাকা জমির ব্যবহার নিশ্চিত করতে পনেরো দিনের মধ্যে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ দেউচা পাঁচামি কয়লা প্রকল্প নিয়েও ইতিবাচক বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, “এই প্রকল্প চালু হলে স্থানীয় বহু যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হবে ৷ ইতিমধ্যে হাজারের বেশি ছেলেমেয়েকে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হয়েছে ৷ যাদের বয়স 18 হয়নি, তারা মাসে দশ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছে ৷ 18 বছর পূর্ণ হলেই তারা স্থায়ী চাকরির সুযোগ পাবে ৷” এছাড়া, রাজ্যে পাঁচটি নতুন স্টিল প্ল্যান্টের পরিকল্পনা রয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে প্রায় 50 হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে ৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকার বাংলায় শিল্পের বিকাশ নিশ্চিত করতে চায়। বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি দিতে চায় ৷

error: Content is protected !!