
রাজ্যে শিল্প ও কর্মসংস্থানে জোর, আন্তর্জাতিক পার্ক, ২৩টি শপিং মল সহ একাধিক প্রকল্পের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
রাজ্যে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে একাধিক ভারী শিল্প এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রকল্পে অনুমোদন দিল রাজ্য মন্ত্রিসভা । এরপরেই শিল্পায়নে বড় বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিউটাউনে আন্তর্জাতিক পার্ক তৈরির ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। বুধবার নবান্ন সাংবাদিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, হিডকোর সঙ্গে পিপিপি মডেলে নিউটাউন এলাকায় প্রায় ২৫ একর জমিতে আন্তর্জাতিক মানের পার্ক তৈরি করতে চলেছি। যার ইংরেজিতে নাম হবে ইন্টারন্যাশনাল ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্টারটেনমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল পার্ক । এখানে ওলার্ড ট্যুর, বিভিন্ন ইনোভেশন, বিনোদনমূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ বিভিন্ন ক্রিয়েটিভির কাজে অংশ নেওয়া সম্ভব হবে। সংক্ষেপে এই পার্ককে আমরা II TEC Park আর এর বাংলার এর নাম হবে বিশ্ব অঙ্গন। আজকের সাংবাদিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে একাধিক শিল্প তৈরির সুযোগের কথা ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে রাজ্যে বিপুল কর্মসংস্থানের কথা উল্লেখ করেন। বুধবার নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দ্রুত শিল্পায়ন আমাদের একটা লক্ষ্য । আমরা চাই আরও বেশি করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হোক ।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর, দুর্গাপুরের মানকর, বর্ধমানের পানাগড় সহ রাজ্যের একাধিক শিল্পাঞ্চলে (ডব্লিউবিআইডিসি নির্মিত) ১০টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্লট বিভিন্ন বড় সংস্থাকে বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে । এই ১০টি প্লটে মোট ২৫১৫ একর জমি সংরক্ষিত হয়েছে এবং প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আসবে বলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন । তাঁর কথায়, “প্রায় ৭০০০০-এর বেশি মানুষের ডাইরেক্ট এবং ইনডাইরেক্ট কর্মসংস্থান হবে ।” মুখ্যমন্ত্রী এও স্পষ্ট করেন, “এইগুলি বেশিরভাগই তৈরি করা হচ্ছে স্টিল ইন্ডাস্ট্রি ।” এর পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রেও বড় পদক্ষেপ করেছে সরকার । মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে ১৫টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে মোট ৪৩টি মাইক্রো এবং স্মল স্কেল ইন্ডাস্ট্রি তৈরির জন্য জমি বরাদ্দ করা হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এগুলি সবই বিভিন্ন জেলায় হবে । এক্ষেত্রে কয়েকশো কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে এবং জেলায় জেলায় কর্মসংস্থান হবে ৷” দেশজুড়ে ক্ষুদ্র শিল্পে পশ্চিমবঙ্গ যে শীর্ষে রয়েছে তা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই মুহূর্তে দেশে ক্ষুদ্র শিল্পে পশ্চিমবঙ্গ পহেলা নম্বর । এই মুহূর্তে রাজ্যের ৯০ লক্ষ ইউনিটে এক কোটি চল্লিশ লক্ষ মানুষ কাজ করে । রাজ্যের ৬৬০ খানা ক্লাস্টার আগেই ছিল । এখনও অনেকেই জমি চাইছেন । বাংলায় বিনিয়োগের জন্য প্রচুর চাহিদা তৈরি হয়েছে । আমরা যতটা পারছি প্রসেস করে জমি দেখে ক্রস চেক করে সময় নিয়ে সব জায়গা থেকে ক্লিয়ারেন্স করে তারপর অনুমোদন দিচ্ছি ।” ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পণ্য বিপণনের জন্যও বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য । রাজ্যের ২৩টি জেলায় ২৩টি শপিং মল বা বড় মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, “আমরা বলেছিলাম সেল্ফ হেল্প গ্রুপের নিজের কাজ বিক্রি করার জন্য আমরা ২৩টা জেলায় ২৩টি শপিং মল তৈরি করব । সরকার এক একর জমি দেবে বিনা পয়সায়, বেসরকারি সংস্থাগুলি বিল্ডিং তৈরি করবে । সেক্ষেত্রে সরকার জমি দিচ্ছে বলেই সেই বিল্ডিংয়ের দুটি ফ্লোর আমাদের সেল্ফ হেল্প গ্রুপকে বিনা পয়সায় দেওয়া হবে।” এই শপিং মলগুলি স্থানীয় পণ্যের বাজারজাতকরণে সহায়ক হবে বলেই মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী । ইতিমধ্যে ১১টি জেলায় এই প্রকল্পের জন্য জমির ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে । এগুলি হল পুরুলিয়া, দার্জিলিং, বাঁকুড়া, কোচবিহার, হাওড়া, জলপাইগুড়ি, ঝাড়গ্রাম, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম মেদিনীপুর ও উত্তর দিনাজপুর । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এছাড়া আরও ১২টি এই ধরনের শপিংমল প্রসেসে রয়েছে । সেগুলি অনুমোদন পেলে সব জেলায় এ ধরনের একটি করে প্রতিষ্ঠান তৈরি হবে । আশা করছি, পরবর্তী ক্যাবিনেট মিটিংয়ে অন্যান্যগুলিও আমরা নিয়ে আসতে পারব ।”