রেড রোডে ঈদের জমায়েতের আয়োজনের অনুমতি দিল না সেনা

প্রত্যেক বছর ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয় কলকাতার রেড রোডে । রাজ্যের সবচেয়ে বড় জমায়েত দীর্ঘদিন ধরেই হয়ে আসছে ইন্দিরা গান্ধি সরণিতে ৷ কিন্তু, এবার সেই জমায়েত নিয়েই তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা । কলকাতার ঐতিহাসিক রেড রোডে এই বছরের ঈদ-উজ-জোহা (৭–৮ জুন) উপলক্ষে প্রধান জমায়েত আয়োজনের অনুমতি দিল না সেনাবাহিনী । ফোর্ট উইলিয়াম-এর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-এর অধীনে কর্মরত কর্নেল ভূমি-র সই করা এক চিঠিতে জানানো হয়েছে, ওই সময়ে রেড রোড ও সংলগ্ন অঞ্চল “সামরিক প্রয়োজন”-এ ব্যবহৃত হবে । ফলে, নেতাজি মূর্তি থেকে ফোর্ট উইলিয়ামের পূর্ব গেট পর্যন্ত বিস্তৃত ময়দানে ঈদের জমায়েতের অনুমতির আবেদন নাকচ করা হয়েছে । মূলত, সেনাবাহিনীর এই সিদ্ধান্ত নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে কলকাতার খিলাফত কমিটি ।খিলাফট কমিটির দাবি, গত বছরও একই ভাবে ঈদের দিন রেড রোডের জমায়েত নিয়ে সমস্যা তৈরি হয় ৷ তারপর বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায় । সেই সময় বিচারপতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, বহু দশক ধরে শান্তিপূর্ণভাবে রেড রোডে দুই ঈদের নামাজ হয়ে আসছে ৷ তাই, নমাজ বন্ধের যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয় । এই বছর সেনাবাহিনীর নতুন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হলেও কলকাতা খিলাফত কমিটি এখনও চূড়ান্ত পদক্ষেপ ঘোষণা করেনি ৷ কমিটির সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান রবিবার বলেন, “আমরা চিঠি পেয়েছি । বিকেলে ৮ নম্বর জাকারিয়া স্ট্রিটের দফতরে বৈঠক ডাকা হয়েছে । সদস্যরাই সিদ্ধান্ত নেবেন কী পদক্ষেপ করা হবে ।” তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন, আলোচনায় কেবল কমিটির সদস্যরাই থাকবেন ৷ কমিটির বাইরের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি ।খিলাফত কমিটির সঙ্গে কলকাতার ঈদ জামাতের সম্পর্ক প্রায় শতবর্ষের । ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় মলানা মুহাম্মদ আলি, মলানা শওকত আলি ও মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে যে খিলাফত-আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, সেই উত্তরাধিকারকে বাঁচিয়ে রেখেছে এই সংগঠন । জাকারিয়া স্ট্রিটের ব্যবসায়ী-সমাজকর্মীদের উদ্যোগে কমিটির তরফে এখনও পর্যন্ত বড় দুই ঈদের নমাজের আয়োজন করা হয় । উপস্থিত থাকেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও । এবার সেনাবাহিনীর এই সিদ্ধান্তের ফলে তা নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা । যদিও, এখনও হাতে কয়েক দিন রয়েছে । তাই, এখনই এই নিয়ে কোনও বক্তব্য দিতে চাইছেন না কেউ । রেড রোডের দীর্ঘ রাস্তায় প্রতি বছর রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক মানুষ একসঙ্গে প্রার্থনার জন্য জড়ো হন ৷ এই দৃশ্য কলকাতার সৌহার্দ্য ও ঐতিহ্যের প্রতীক । সামরিক কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় এই বছর সেই সমাবেশ হয়তো ভিন্ন জায়গায় সরতে পারে, কিংবা আইনি লড়াইয়ের পথও খোলা । এখন সবার চোখ খিলাফত কমিটির রবিবারের বৈঠকের দিকে ৷

error: Content is protected !!