মাহেশ থেকে বেলুড়, দীঘা থেকে কালীঘাট দিকে দিকে পালিত হচ্ছে স্নানযাত্রা উৎসব

আজ প্রভু জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা। এ উৎসব আদপে বর্ষার আগমন উৎসব। গ্রীষ্মের দাবদাহ প্রায় শেষ লগ্নে, দোরগোড়ায় আষাঢ়। এমতবস্থায় প্রভুর স্নানযাত্রা, তারপর এক পক্ষকালের জন্য আড়ালে যাবেন প্রভু, সঙ্গে বলভদ্রদেব ও তাঁর ভগিনী। তারপরই বর্ষা সর্ববৃহৎ উৎসব রথযাত্রা । আজ দিকে দিকে পালিত হচ্ছে তাঁর স্নানযাত্রা উৎসব। ‘স্কন্দপুরাণ’-এ উল্লেখ রয়েছে যে, স্বয়ং জগন্নাথ ইন্দ্রদ্যুম্ন মহারাজকে বলেছিলেন, জৈষ্ঠ্য-পূর্ণিমাতে আমার আবির্ভাব দিবসে আমাকে বাইরে, মণ্ডপের উপর নিয়ে গিয়ে ভক্তিভাবে আদর-যত্নে মহাস্নান করাবে। সেই আদেশ আজও পালিত হচ্ছে। এবার ৬২৯ বর্ষে পা দিচ্ছে মাহেশের রথ ও স্নানযাত্রা উৎসব। মাহেশে, ২৮ ঘড়া গঙ্গাজল ও দু’মণ দুধ দিয়ে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে স্নান করানো হচ্ছে। মন্দির সংলগ্ন স্নানপিড়ির মাঠে জগন্নাথদেবের স্নানমঞ্চে স্নানযাত্রা চলছে। ১০৮ ধরনের বিশেষ দ্রব্য দিয়ে জগন্নাথদেবের মহাঅভিষেক স্নানযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন তীর্থের জল, নদীর জল সহ নানা উপাচার দিয়ে জগন্নাথদেবের মহাঅভিষেক হয়। অন্যদিকে সদ্য দীঘায় তৈরি হয়েছে জগন্নাথদেবের মন্দির। সেখানেও আজ জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে স্নানযাত্রার উৎসব চলছে। বুধবার সকাল ৯টায় স্নানযাত্রা অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। চলছে বিশেষ পুজোপাঠ। এই বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মায়াপুর থেকে ২৫ জন ব্রহ্মচারী এসেছেন। ১০৮টি কলসিতে বিভিন্ন তীর্থস্থানের নদীর জল, পঞ্চামৃত মিশিয়ে তৈরি হয়েছে জগন্নাথের স্নানের জল। ইস্কন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই জলে মেশানো হবে ফলের রসও। মাটি ও পেতলের ১০৮টি কলসি জোগাড় করা হয়েছে। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে ১১টা থেকে স্নান করানো শুরু হয়েছে। এরপর দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে সাজসজ্জা। এরপর জগন্নাথ ও বলরামের হস্তিবেশ আর সুভদ্রার পদ্মবেশ হবে। কালীঘাটে পড়েছিল সতীর পদাঙ্গুলি, সেখানেও পালিত হচ্ছে স্নানযাত্রা উৎসব। কথিত আছে , জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দেবীর পদাঙ্গুলি হ্রদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন দুই ব্রহ্মচারী -ব্রহ্মানন্দ গিরি ও আত্মারাম ব্রহ্মচারী। এই দিনেই সতী অঙ্গে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তাই স্নানযাত্রাকে কালীঘাটের মায়েরও আবির্ভাব তিথি হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়। কালীঘাট মন্দিরে এদিন সতী অঙ্গের প্রস্তরীভূত শিলাটিকে স্নান করানো হয়। স্নানযাত্রার দিন ভোরে নিয়ম মেনে স্নান উৎসবের সূচনা হয়। পূজারীরা স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরে চোখে কাপড় বেঁধে মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করেন। শিলাকে গঙ্গাজল, অগুরু,জবাকুসুম তেল, আতরের মিশ্রণ দিয়ে স্নান করানো হয়। স্নানের পর সতী অঙ্গ মুছে তাঁকে বেনারসি বস্ত্র দিয়ে ঢেকে আবার রুপোর সিন্দুকে ভরে রাখা হয়। বেলুড় মঠে স্নান করানো হয় আত্মারামের কৌটোকে। এদিন বাইরে বের করে আনা হয় সেটি। তারপর স্নান করিয়ে বিশেষ পুজো করা হয়। প্রসঙ্গত, আত্মারামের কৌটে শ্রীরামকৃষ্ণের অস্থি-চিতাভস্ম থাকে।

error: Content is protected !!