
পুরীর মতোই উড়ল ধ্বজা, মহাযজ্ঞে পূণ্যাহুতি মমতার, বুধবার উদ্বোধনের পরেই সবার জন্য খুলছে দিঘার জগন্নাথ মন্দির
বুধবার অক্ষয় তৃতীয়ার দিন দিঘায় উদ্বোধন হবে নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের। সোমবারই দিঘায় পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার মঙ্গলপুজোয় যোগ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বারোদ্ঘাটনের আগের দিন আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ হোমযজ্ঞের। মঙ্গলবার সকাল ৯ টা নাগাদ শুরু হয়েছে এই যজ্ঞ। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী যজ্ঞের পূর্ণাহুতিতে অংশ নেন পুরীর সেবায়েত রাজেশ দ্বৈতাপতি এবং ইসকনের রাধারমণ দাসের সঙ্গে । পূর্ণাহুতির পর নিজে হাতে আরতি করেন মুখ্যমন্ত্রী । এরপর পুরীর ঐতিহ্য মেনে, মন্দিরের চূড়ায় উড়ল ধ্বজা। আগামীকাল মন্দির উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিদিন উঠবে এই ধ্বজা, বলেই জানা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে ধ্বজা নিয়ে চুড়োয় উঠে ধ্বজাস্থাপন করা হয়। করজোড়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকলেন মুখ্যমন্ত্রী। গতকাল, সোমবারই দিঘায় পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারও গিয়েছেন সোমবার গিয়েছেন দিঘায়। মঙ্গলবার পূর্ণাহুতির পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ধর্ম কখনও মুখে প্রচার করে হয় না, হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হয় । আমি কোনও বিশেষ গোত্রের হয়ে পুজো করি না, করি মা-মাটি-মানুষের গোত্রে । মা-মাটি-মানুষ ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকি ।” তাঁর কথায়, সমুদ্রের টানে যেমন পর্যটকরা দিঘায় আসেন, এবার আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়ায় দিঘা হয়ে উঠবে প্রকৃতি ও ধর্মের এক অপূর্ব মিলনক্ষেত্র । দিঘা আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি । সৈকত শহর দিঘা এখন শুধু সমুদ্রের নয়, ভক্তি ও সংস্কৃতির নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠতে চলেছে বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী । জানা গিয়েছে, এদিনের মহাযজ্ঞে ১০০ কুইন্টাল আম, বেলকাঠ ও দু’ কুইন্টাল ঘি ব্যবহৃত হয়েছে । আচার সম্পন্ন করেছেন পুরী থেকে আসা ৫৭ জন সেবক ও ইসকনের ১৭ জন সন্ন্যাসী । যজ্ঞের মন্ত্রপাঠে লক্ষাধিকবার উচ্চারিত হয়েছে নরসিংহ মন্ত্র । ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে দেব-দেবীর আহ্বান এবং জগন্নাথের দুধস্নানের মতো গুরুত্বপূর্ণ আচার । মন্দির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য রাধারমণ দাস জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে ফুলে সাজানো বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হবে জগন্নাথদেবের বিগ্রহ। আগামিকাল, অর্থাৎ বুধবার অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্যলগ্নে সম্পন্ন হবে জগন্নাথদেব ও রাধাকৃষ্ণের পাথরের বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠা । আচার অনুযায়ী, প্রথমে বিগ্রহের শরীরে সোনা, রুপো ও তামার তার পেঁচিয়ে সেই তার পুরোহিতের কোমরে বাঁধা হবে । এরপর ঘট স্থাপন, কুণ্ড স্থাপন এবং শেষে প্রতিবিম্ব প্রতিস্থাপন করে সম্পন্ন হবে প্রাণপ্রতিষ্ঠার মূল পর্ব । পাশাপাশি, প্রসাদ প্রস্তুতির কাজও চলছে জোরকদমে । পুরীর আদলে দিঘাতেও ঠাকুরের প্রসাদ হিসেবে থাকছে খাজা, পেঁড়া, গজা ও রসগোল্লা । মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন, এই মন্দিরের প্রসাদ হবে বিশেষ আকর্ষণ । মঙ্গলবারের যজ্ঞে উপস্থিত ছিলেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা । দিঘার মন্দির চত্বরে তৈরি হয়েছে বিশাল মঞ্চ । বুধবার জগন্নাথের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে সেখানে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । সেখানে থাকবেন নৃত্যশিল্পী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়, সংগীতশিল্পী নচিকেতা, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, ইমন চক্রবর্তী ও জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্টজনেরা । প্রায় এক হাজার শিল্পী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন । মঞ্চের সামনে প্রায় আট হাজার আসন পাতা হয়েছে দর্শকদের জন্য ।রবিবার থেকেই দিঘায় জমতে শুরু করেছে পুণ্যার্থীদের ভিড় । মঙ্গলবার সেই ভিড় আরও বেড়েছে । মন্দিরের ভেতরে চলছে ধর্মীয় আচার, আর বাইরে দিঘা জুড়ে চলছে কড়া নিরাপত্তার নজরদারি । মন্দির চত্বরে নিরাপত্তা কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে, মোতায়েন হয়েছে প্রচুর পুলিশ ও সিসিটিভি নজরদারি । এদিন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বুধবার দুপুর আড়াইটায় হবে মূল অনুষ্ঠান । তারপর তিনটের সময় মন্দিরের দরজা খুলে যাবে সর্বসাধারণের জন্য । সেই সঙ্গে শুরু হবে দিঘার এক নতুন ইতিহাসের যাত্রা ।