
জরুরি অবস্থা ঘোষণার দিন ‘সংবিধান-হত্যা’ দিবস পালনে আপত্তি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পাঠানো একটি চিঠিকে বিরুদ্ধে সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পাঠানো একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বুধবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি এই নিয়ে কেন্দ্রকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন । মুখ্যমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের মুখ্য সচিবের কাছে কেন্দ্র থেকে একটা চিঠি এসেছে তাতে বলা হচ্ছে ২৫ জুন সারা দেশ জুড়ে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ হিসাব পালন করা হবে, ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে। এর পিছনে রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে। ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ কথা বলাটায় আপত্তি আছে। চিঠিতে লেখা আছে ২৫ জুন পালন করতে হবে। ইমার্জেন্সি আমরা জানি, দেশের মানুষ ইমার্জেন্সি মেনে নেননি সেটাও আমরা জানি। আমিও তখন কংগ্রেস করতাম। ইমার্জেন্সি হত্যা দিবস করতে পারতো। আমার এটায় সম্পূর্ণ আপত্তি আছে”। পাশাপাশি কেন্দ্রকে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, আজ কি গণতন্ত্র দেশে আছে? প্রতিদিন তারা গণতন্ত্র হত্যা করছে, প্রতিদিনই তো গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করতে পারত। আপনাদের ভাষা, কথা রোজ সংবিধান বদলাচ্ছে। নকল একটা ধর্ম মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়ে আপনাদের এজেন্ডা চাপিয়ে দিচ্ছেন। প্রতিটা রাজ্যের গণতন্ত্র ভেঙে দিয়েছেন। পার্লামেন্ট নতুন বানিয়েছেন। আগেরটা যখন ভেঙেছেন মনে হয়নি ওটা হেরিটেজ? মহারাষ্ট্র, বিহার, মধ্যপ্রদেশে কিভাবে সরকার করছেন? আমি আপনার সাথে দ্বিমত হচ্ছি না, কোথাও কোথাও হত্যা করা হয়েছিল”। ইমার্জেন্সির সময় অনেক নেতা এমনকি সাংবাদিকদেরও জেলবন্দি করা হয়েছিল । এই বিষয়টি আমরাও জানি । এটাও জানি, জরুরি অবস্থা কোনও ভাবেই দেশের মানুষ মেনে নেয়নি । এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে ইমার্জেন্সি হত্যা দিবস করতে পারত । কেন সংবিধান হত্যা দিবস নাম দেওয়া হয়েছে । আমি সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের এই ভাবনার বিরোধিতা করছি ।” এরপরই কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, “আজকে কি গণতন্ত্র ভারতবর্ষে আছে ? যেভাবে কেন্দ্রীয় সরকার আচরণ করছে, তাতে তো প্রত্যেকদিন একটা করে গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন হতে পারে । প্রতিদিন কেন্দ্রীয় সরকার সাধারণ মানুষের ফান্ডামেন্টাল রাইটস কেড়ে নিচ্ছে, গণতন্ত্রকে তারা হত্যা করছে । তারা রাজ্যের অর্থনীতিকে বুলডোজ করার চেষ্টা করছে । রাজ্য সরকারগুলির অধিকার কেড়ে নেওয়ারও চেষ্টা করছে ।”মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, “আপনারা বলছেন গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করতে হবে, আপনারা কি গণতন্ত্রকে অত্যধিক শক্তিশালী করছেন । আপনাদের ভাষা, আপনাদের কথা নিয়ে নাইবা বললাম । রোজদিন সংবিধান বদলাচ্ছেন । আর নিজেরা নকল একটা ধর্ম মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়ে আপনারা আপনাদের এজেন্ডা কার্যকরী করতে চাইছেন। আর সব সময় বাংলাকে নিয়ে আপনারা মিথ্যাচার করেন ।” মমতার কথায়, “প্রত্যেকটা রাজ্যের ডেমোক্রেসি আপনারা নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন । ভারতীয় সংসদ, যেখানে কনস্টিটিউশন পাশ হয়েছিল, সেটিকেও আপনারা ছিনিয়ে নিয়েছেন । আপনারা নতুন করে সংসদ ভবন বানিয়েছেন । আপনাদের ভাবা উচিত ছিল না ওটা ভাঙা উচিত নয় ? মনে হয়নি ওটা হেরিটেজ ছিল ?”এদিন কেন্দ্রকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “মহারাষ্ট্রে সরকার ভাঙার সময় মনে হয়নি এতে গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে ! আপনারা ভুলে গিয়েছেন কীভাবে বিহার সরকারকে ভেঙে দিয়েছিলেন ? কীভাবে মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতা নিয়েছিলেন ? আপনারা বাংলার উপর কীভাবে রাষ্ট্রপতি শাসন চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন । আপনাদেরই বরঞ্চ কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হওয়া উচিত ।”এদিন মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, “আপনাদের কি মনে হয় সংবাদমাধ্যমকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিচ্ছেন আপনারা ? আপনারা বলছেন, ইমার্জেন্সির সময় সংবাদ মাধ্যমের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল । আমি সবটা অস্বীকার করছি না । কিন্তু আজ কি হচ্ছে ! কোনও সংবাদমাধ্যম কি এখন নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছে ? সোশাল মিডিয়া, ইউটিউব, ফেসবুক কি নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে ? আপনারা সবকিছুই কড়ায়ত্ব করার চেষ্টা করছেন । কিন্তু এরপরেও কেউ কেউ নিরপেক্ষভাবে নির্ভীক হয়ে কাজ করার চেষ্টা করছেন, আমি তাঁদের স্যালুট জানাই ।”কটাক্ষের সুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আর আপনি নিরপেক্ষ মিডিয়ার কথা বলছেন ! এখন তো সংবাদ মাধ্যমগুলিকে আপনাদের ইনস্ট্রাকশনের ভিত্তিতে কাজ করতে হয় । গণতন্ত্রের তিনটে পিলার, একটা সংবাদ মাধ্যম, একটা নির্বাচন কমিশন, আর রয়েছে বিচারালয় । কোন বিষয়টিকে আপনারা নিরপেক্ষ থাকতে দিয়েছেন ?” মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, “নির্বাচন কমিশন একতরফাভাবে কেন্দ্রের শাসকদলের অঙ্গুলিহেলনে চলছে । সেখান থেকে কি জাস্টিস পাওয়া সম্ভব ! এখন বিজেপি করলেই সাত খুন মাফ, আর অন্যকে সমর্থন করলে বন্ধ ঝাঁপ ।” মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, “কনস্টিটিউশন মরালিটির কথা বলছেন কারা, যাঁরা কনস্টিটিউশনকে কোনও ভাবেই সম্মান দেন না তাঁরা ! বাংলাতে কিছু হলেই 155টা টিম পাঠান । কিন্তু উত্তরপ্রদেশে যখন কিছু হয়, গুজরাতে যখন দাঙ্গা হয়, তখন আপনারা কেন চুপ থাকেন ! বিজেপির নেতারা যেভাবে মহিলাদের অসম্মান করেন তখন কোথায় যায় আপনাদের কনস্টিটিউশনের মরালিটি !”