‘বিজেপির বিরুদ্ধে একত্রিত হোন’, ১৫ জন বিরোধী নেতাকে চিঠি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অবিজেপি নেতাদের একজোট করার চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাত্পর্যপূর্ণভাবে রাজ্যের ভোটপ্রক্রিয়া চলাকালীন আরও একবার সেই প্রক্রিয়া শুরু করলেন তৃণমূলনেত্রী। একযোগে বিজেপি বিরোধী সব নেতাকে চিঠি লিখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি করলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার স্বৈরাচারী শাসন চালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত হানছে। অবিজেপি রাজ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে। নন্দীগ্রামের ভোটের ঠিক আগের দিন মমতার লেখা এই তিন পাতার চিঠি গিয়েছে কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী , এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পওয়ার, ডিএমকে সুপ্রিমো এমকে স্ট্যালিন, সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডি, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুখ আবদুল্লাহ, পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি এবং সিপিআইএম লিবারেশনের নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের কাছে। রাজ্যের ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীনই কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া এবং বাম নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের কাছে মমতার এই চিঠি যাওয়াটা আলাদাভাবে তাত্পর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অবিজেপি নেতাদের লেখা ওই চিঠিতে তৃণমূলনেত্রী দাবি করেছেন,’কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দেশের গণতন্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর একের পর এক হামলা করে চলেছে। একের পর এক রাজ্যে অবিজেপি সরকারকে সমস্যায় ফেলা হচ্ছে রাজ্যপালের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে। রাজ্যপালরা বিজেপির পদাধিকারীদের মতো কাজ করছেন। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নির্লজ্জের মতো ইডি-সিবিআই-সহ কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির অপব্যাবহার করছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ এবং তামিলনাড়ুতে ডিএমকে এবং তৃণমূলনেতাদের টার্গেট করা হচ্ছে।’ মমতার দাবি, ‘বিজেপি অসীম ক্ষমতা নিয়ে বিরোধী দলগুলিকে বেসামাল করার চেষ্টা করছে। আজ কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক এমন এক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, যা এই দেশে আগে কখনও হয়নি। আর এই সব কিছুই একটি উদ্দেশ্যে। বিজেপি চায়, বিরোধী দলগুলি যাতে কোনওভাবেই নিজেদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে। তাই আমার মনে হয়, সময় এসে গিয়েছে বিজেপির এই সংবিধানের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। আমি তৃণমূলের চেয়ারপার্সন হিসেবে আপনাদের সঙ্গে যৌথভাবে লড়াই করতে চাই। এবং ভারতবাসীর কাছে একটা বিকল্প তুলে ধরতে চায়।’ সাত দফা দাবির মধ্যে উল্ল্যেখ করা হয়েছে –
১) রাজ্যপালকে ব্যবহার করে অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে নির্বাচিত সরকারকে বিব্রত করা হচ্ছে।
২) বিভিন্ন রাজ্যে অবিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআই ও অন্যান্য সংস্থার অপব্যাওহার করা হচ্ছে।
৩) ইচ্ছাকৃতভাবে অবিজেপি রাজ্য সরকারগুলিকে টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার।
৪) ন্যাশানাল ডেভলপমেন্ট কাউন্সিল, ইন্টার স্টেট কাউন্সিল, ও প্ল্যানিং কমিশনের মতো সংস্থা তুলে দেওয়া হচ্ছে। মূলত, রাজ্য সরকার দাবি দাওয়া পেশ করতে পারে এমন সব মঞ্চকে অকেজী করে দেওয়া হচ্ছে।
৫) বিভিন্ন রাজ্যে অবিজেপি সরকার ভাঙতে বিপুল পরিমাণে টাকার ব্যাবহার করছে বিজেপি।
৬) সরকারি সম্পত্তির বেসরকারিকরণের নীতি গণতন্ত্রের উপরে আঘাত করছে।
৭) কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের মধ্যে এমন তিক্ত সম্পর্ক তৈরি করা হচ্ছে যা স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে বেনজির।
এই সাত দফা দাবির পাশাপাশি মমতা অভিযোগ করেছেন, বিজেপি একদলীয় ব্যাবস্থা কায়েম করতে চাইছে ভারতে। অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির সাংবিধানিক অধিকার ও স্বাধীনতা কেড়ে তাদের কার্যত পুরসভায় পরিণত করতে চাইছে বিজেপি। সেখানে দাঁড়িয়ে দেশের অবিজেপি দলগুলিকে একজোট করে বিকল্প মঞ্চ তৈরির ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট মিটলেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চান তিনি। রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, একুশের বিধানসভা ভোটে বাংলার মাটিতে বিজেপি যে জোর কামড় বসাতে চলে তা স্পষ্ট।