অভিজ্ঞ, ঠান্ডা মাথার কাউন্টিং এজেন্ট রাখতে হবে, বাংলায় তৃণমূলই আবারও ক্ষমতায় ফিরছেঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

যে যাই বলুক না কেন, বাংলায় তৃণমূলই আবারও ক্ষমতায় ফিরছে। আর সেটাও দুই তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে। শুক্রবার দুপুরে দলের নেতা, প্রার্থী, সাংসদ, বিধায়কদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করে এমন আত্মবিশ্বাসী বার্তাই দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপনারাই জিতবেন। বিজেপি সকাল বেলা রটাতে পারে, ওরা জিতছে। কখনওই কাউন্টিং সেন্টার ছাড়বেন না। শেষ পর্যন্ত থাকবেন। আজ, শুক্রবার এভাবেই দলীয় প্রার্থী, ইলেকশন এজেন্ট ও জেলাসভাপতিদের নিয়ে বৈঠকে আশ্বস্ত করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ভোর পাঁচটার মধ্যে পৌঁছে যাবেন গণনাকেন্দ্রে। অন্য কারও কাছ থেকে খাবার খাবেন না। ড্রাই ফুড খাবেন। যেমন- কেক, বিস্কুট, ক্রিম রোল, রুটি আর আলু ভাজা। সময় লাগলেও ধৈর্য হারাবেন না। এদিন বৈঠকে মমতার পাশাপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ১৭ সি  ফর্মের সঙ্গে ইভিএম ও ভিভিপ্যাট মিলিয়ে দেখবেন। একটা ওয়ার রুম খোলা হচ্ছে। সেখানে টেলিফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। নম্বরটি হল ৯০০৩০০৩০০১।  আপনাদের ফোন ধরার জন্য কর্মীরা প্রস্তুত থাকবেন। কোন সমস্যা হলেই এই নম্বরে জানাবেন। এটাই কাউন্টিং হেল্প নম্বর। কোনও মেশিন যেন সিল ভাঙ্গা না থাকে। ভালো করে সে দিকে নজর রাখবেন। যদি বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হয়,  তবে রিলিভারকে বসিয়ে তবেই যাবেন। সবাইকে গণনার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ভোটের ফলাফল প্রসঙ্গে মমতা জানান, ৬৫ টির মত সিটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। জলপাইগুড়ি আলিপুরদুয়ার কোচবিহার বাঁকুড়া পুরুলিয়ার সিটগুলি নিয়ে বিজেপির কিছু প্ল্যান আছে। তাই এক ইঞ্চিও জমি ছাড়া চলবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিলেন সুপ্রিমো। বলেন, মানুষের ভালোবাসা আপনারা পেয়েছেন। কালকের দিনটি হল শেষ লড়াইয়ের দিন। বিহারে যা করেছিল এখানেও তা ওরা করতে পারে। যারা মাটি কামড়ে কাজ করবে তাদেরকে পার্টি পুরস্কৃত করবে। এতদিন, নিজেদের জীবন বিপন্ন করে আপনার কাজ করেছেন। দলের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। তাই বাংলার ফল কী হবে তার দিকে গোটা দেশ তথা পৃথিবী তাকিয়ে রয়েছে। কোন ভুল হলে মানুষ কিন্তু ক্ষমা করবে না। মনে রাখবেন, প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসে বসেছিল। কিন্তু অধিকাংশ এক্সিট পোল বলেছে, আমরা আসছি। ২০০ টিরও বেশি সিট পাব বলেও জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বললেন, চিন্তার কোন কারণ নেই। সব শেষে ফের আরও একবার কর্মীদের সাবধান করে তিনি বলেন, বিজেপি টাকা দিলে কাউন্টিং সেন্টার ছেড়ে দেব এটা যেন না হয়। একই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, তাঁরা এক্সিট পোলে নয়, একজ্যাক্ট পোলে বিশ্বাসী। আর সেই রেজাল্ট করে দেখাবেন বাংলার মানুষ। দলে দলে তাঁরা বুথে গিয়ে তৃণমূলকেই ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য ভোট দিয়েছেন। তাঁদের ভোটে জয়ী হয়েই বাংলায় তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করতে চলেছে তৃণমূল। এমনটাই জানিয়ে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তৃণমূলনেত্রী জানিয়েছেন, এবারে উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহলে তৃণমূল খুব ভাল ফল করবে। উল্লেখ্য ২০১৬ সালে তৃণমূল উত্তরবঙ্গের ৫৪টি আসনের মধ্যে ২৪টি আসন দখল করেছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভায় উত্তরবঙ্গের ৮টি আসনেই পরাস্ত হয় তৃণমূল। এর মধ্যে ৭টি আসনেই জয়ী হয়েছিল বিজেপি। ১টি আসনে জয়ী হয় কংগ্রেস। এবারে কিন্তু তৃণমূল আশাবাদী উত্তরবঙ্গ থেকে খুব কম করেও ৩০টি আসন আসবে। আবার জঙ্গলমহলের ২৮টি আসনের মধ্যে ২০১৬ সালে তৃণমূল পেয়েছিল ২১টি আসন। অথচ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের ৫টি লোকসভা আসনেই হেরেছিল তৃণমূল। সবকটি আসনেই জিতেছিল বিজেপি। এবার কিন্তু তৃণমূল বেশ আত্মবিশ্বাসী যে এবারে জঙ্গলমহলের বুক থেকে অন্তত ২২টি আসন আসবে। তৃণমূলনেত্রীর গলাতেই সেই সুরই এদিন শোনা গিয়েছে।

প্রার্থীদের দিলেন একগুচ্ছ পরামর্শ

🔵 ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বর্ধমানে কিছু জায়গায় যেহেতু হারছিল দল, তাই কয়েক জন কাউন্টিং এজেন্ট গণনা শেষ হওয়ার আগেই টেবিল ছেড়ে চলে গেছিলেন। এটা যেন এবার না হয়।

🔵 অভিজ্ঞ এবং ঠান্ডা মাথার কাউন্টিং এজেন্ট রাখতে হবে।
🔵 যেখানে দেখা যাচ্ছে খুব অল্প মার্জিনে তৃণমূল হেরেছে, সেখানে রিকাউন্টিং চাইতে হবে।• কোনও গুজবে কান দেওয়া যাবে না। বিজেপি অনেক গুজব ছড়াতে পারে।
🔵 আমাদের জয় নিশ্চিত, এই নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। বিভ্রান্তিমূলক প্রচারে যেন কেউ কান দেবেন না।
🔵 নিজেদের খাবার নিজেদের নিয়ে যেতে হবে। কোনও বাইরের খাবার খাওয়া যাবে না।
🔵 প্রার্থীরা যেন খাতা-কলম নিয়ে ভোর ভোর গণনাকেন্দ্রে পৌঁছে যান।
🔵 তৃণমূল নিশ্চিত জিতবে, এমন আসনগুলিতে বিজেপি গোলমাল বাধানোর চেষ্টা করবে। তাই প্রার্থীরা যেন সতর্ক থাকেন। কোনও সমস্যা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে যেন দলীয় নেত্বকে জানানো হয়।