নদিয়ার তেহট্টের পাথরঘাটার বাড়িতে পৌঁছাল শহিদ জওয়ান ঝন্টু আলি শেখের মরদেহ

সকাল থেকেই একটু একটু করে ভিড় জমছিল পাড়ার ছেলে ঝন্টু আলি শেখের বাড়ির সামনে ৷ শনিবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ নদিয়ার তেহট্টের পাথরঘাটার বাড়িতে শহিদ জওয়ানের দেহ পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন পরিবারের সদস্যরা ৷ পাড়া-প্রতিবেশী থেকে শুরু করে গোটা গ্রাম শোকস্তব্ধ ৷ পাড়ার ছেলেকে শেষবার দেখতে ভিড় জমে যায় শহিদের বাড়ির সামনে ৷ সকলেই শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হন ৷ ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যারিকেড করে পুলিশ ৷ শহিদ জওয়ানের বাড়ির সামনেই একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে ৷ সেখানে তাঁকে জাতীয় পতাকায় মুড়ে পুষ্পস্তবক দিয়ে শেষশ্রদ্ধা জানানো হবে ৷ দেওয়া হবে গান স্যালুট ৷ গ্রামের বীর সন্তানকে শেষবারের মতো দেখার জন্য তাঁর বাড়ির প্রায় ৫ কিলোমিটার আগে থেকে ভিড় জমিয়েছেন এলাকাবাসীরা ৷ ভিড় সামলাতে মঞ্চের পাশে দেওয়া হয়েছে ব্যারিকেডও ৷ গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে নিরীহ পর্যটকদের উপর হামলা চালায় জঙ্গিরা ৷ এরপর জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু করে নিরাপত্তাবাহিনী ৷ গোপন সূত্রে প্রাপ্ত খবরের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুর জেলায় তল্লাশি অভিযান শুরু করে নিরাপত্তাবাহিনী ৷ এলাকায় তাঁদের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালাতে শুরু করে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা ৷ অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর বিশেষ বাহিনীর 6 প্যারার জওয়ান ঝন্টু আলি শেখ ৷ জঙ্গিদের গুলিতে শহিদ হন তিনি ৷ এরপর শুক্রবার গভীর রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছয় শহিদ জওয়ানের দেহ ৷ সেখানে তাঁর কফিনে জাতীয় পতাকা ও ফুলের স্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ৷ এরপর দেহটি মর্গে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখান থেকে শনিবার সকালে নদিয়ার তেহট্টে তাঁর বাড়ির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ স্বামীর মৃত্যুসংবাদ মেনে নিতে পারছেন না শহিদ জওয়ান ঝন্টু আলির স্ত্রী ৷ এক মেয়ে ও এক ছেলে রেখে চলে গেলেন তাঁর স্বামী ৷ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শহিদ জওয়ানের স্ত্রী জানান, তাঁর স্বামী যে আর কখনই ফিরে আসবেন না, এই সত্যিটা মেনে নিতে পারছেন না ৷ বাচ্চাদের ভালোবাসতেন খুব ৷ বাড়ি আসলেই নিজের সন্তানদের ছাড়াও এলাকার শিশুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতেন তিনি ৷ তবে, সেই সমস্ত দিন যে আর ফিরে আসবে না, তা ভাবতেই পারছেন না তাঁর স্ত্রী ৷ তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে ফোনে স্বামীর কাছ থেকে শেষ ম্য়াসেজটা পান ৷ সেখানে জওয়ান জানান, কাজে ব্যস্ত থাকবেন ৷ পরের দিন তাঁদের ফের কথা হবে ৷ ম্যাসেজটি পাওয়ার পর নিত্যদিনের কাজে ব্যস্ত হয়ে যান শহিদ জওয়ানের স্ত্রী ৷ কিন্তু, প্রহর গোনা শুরু আগেই তাঁর কাছে খবর আসে আহত হয়েছেন জওয়ান ৷ তবে, শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার খবর পেয়ে খানিক আশ্বস্ত হন তিনি ৷ শহিদ জওয়ানের স্ত্রী বলেন, “বিকেলে আমি খবর পাই আহত হয়েছেন ৷ কিন্তু স্থিতিশীল রয়েছেন ৷ ভেবেছিলাম শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবে ৷ পরে আমাকে আসল খবরটি দেওয়া হয় ৷” তিনি আরও বলেন, “বরাবর নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি ৷ তাঁর কাছে দেশ আগে ছিল ৷ তারপর পরিবার ও বন্ধুবান্ধব ৷ অভিযানের কোনও তথ্য কখনও আমাকে জানাতেন না ৷” কফিন বাড়ির উঠোনে এনে রাখতেই ঝন্টুর স্ত্রী ঝুমা শেখকে আর আটকে রাখা যায়নি। স্বামীর দেহ জড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি। সামলানো যায়নি মা-বাবাকেও। জাতীয় পতাকায় মুড়িয়ে দেওয়া হয় শহিদের দেহ। সেনার নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে শেষ বিদায় জানানো হয়। তিন ভাইয়ের একজন ছিলেন জওয়ান ঝন্টু আলি শেখ ৷ তিনি এবং তাঁর বড় ভাই রফিকুর শেখ উভয়েই সেনাবাহিনীতে কর্মরত ৷ এদিন গ্রামবাদীদের মুখে একটাই কথা- যে ভাবে কাশ্মীরে জঙ্গিরা নৃশংসভাবে ঝন্টু আলি শেখকে হত্যা করেছে, ঠিক সেই ভাবেই জঙ্গিরাও যাতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় ভারতীয় সেনার গুলিতে। এখন দেখার, কেন্দ্রীয় সরকার পাক মদত পুষ্ট জঙ্গি বাহিনীদের বিরুদ্ধে কত তাড়াতাড়ি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এক গ্রামবাসী বলেন, ‘আমরা এর বদলা চাই। আমাদের ছেলেটা চলে গিয়েছে। কিন্তু জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এর যোগ্য জবাব দিতে হবে। যতদিন না বদলা হচ্ছে, আমাদের শান্তি পাব না।’

error: Content is protected !!