মুর্শিদাবাদে হাঙ্গামার জন্য ছিল ২০০ সিলিন্ডার, হ্যান্ড গ্রেনেড!

ওয়াকফ আন্দোলনকে ‘শিখণ্ডী’ করে যে হিংসা ছড়িয়েছিল সামশেরগঞ্জ, সূতি ও ধুলিয়ানের বিস্তীর্ণ অংশে, তাতে বড়সড় নাশকতা বাস্তবায়িত করতে ছক ছিল সিলিন্ডার বিস্ফোরণের। বিস্ফোরণের মাত্রাকে বাড়াতে মোট ২০০টি এলপিজি সিলিন্ডার জোগাড় করেছিল ওপার আর এপারের সম্মিলিত ‘দুর্বৃত্ত বাহিনী’। মজুত করা হয়েছিল হ্যান্ড গ্রেনেডও। যে গ্রেনেড বানাতে অভ্যস্ত একদা জেএমবি, অধুনা এবিটি’র জঙ্গিরা। উপদ্রুত এলাকার বিভিন্ন বাড়ির ছাদে রেললাইনের পাথর, কাচের বোতলের সঙ্গেই প্রাণঘাতী এসব উপকরণ মজুত করা হয়েছিল। ঘটনার তদন্তে নেমে এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। হাঙ্গামা যে পরিকল্পিত, হিংসা ছড়ানোর উপকরণের জোগান দেখে আরও নিশ্চিত হয়েছে প্রশাসন। অশান্তির পর হিংসাবিধ্বস্ত ঘরবাড়ি পরীক্ষা করে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে একের পর এক গৃহস্থ বাড়ি যে কায়দায় ধ্বংস করা হয়েছে, তাতে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ হয়ে থাকতে পারে। কারণ বিস্ফোরণের জেরে কয়েকটি বাড়ির দেওয়ালের অংশ ভেঙে পড়েছে, ফাটল ধরেছে বাড়ির ঢালাই এবং ছাদেও। এমনকী কয়েকটি বাড়ির লোহার গ্রিলও ঢালাই থেকে খুলে মাটিতে ঝুলছিল। গোয়েন্দারা বলছেন, লাল-সাদা মশলা মিশিয়ে তৈরি হাতবোমায় এই অভিঘাত কোনওভাবেই সম্ভব নয়। এই পর্বেই বাংলাদেশি জঙ্গিদের তৈরি ‘হ্যান্ড গ্রেনেডে’র প্রয়োগ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। 
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি এপ্রিল মাসের সাত-আট তারিখের মধ্যে হিংসা ছড়ানোর যাবতীয় উপকরণ জোগাড় করে ফেলেছিল ভারত-বাংলাদেশের সম্মিলিত ‘হানাদার’রা। ৯ এপ্রিল মুর্শিদাবাদের বুক চিরে যাওয়া জাতীয় সড়ক অবরোধের মধ্যে দিয়ে আন্দোলনের ‘টিজার’ দেখানো হলেও, পরিকল্পনা হয়, ১১ এপ্রিল দুপুর থেকে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আক্রমণ শানানো হবে রেল, সড়ক, সরকারি সম্পত্তি, থানা ও পুলিস কর্মীদের উপর। ওই সূত্রটি জানিয়েছে, ধুলিয়ানের এক এলপিজি ডিলারকে ভয় দেখিয়ে তাঁর গোডাউন থেকে বেশ কিছু সিলিন্ডার জোগাড় করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত দুই সংগঠনের লোকজন। পরিকল্পনা হয়, সরকারি ভবন ও থানায় আক্রমণ পর্বে সিলিন্ডার খুলে আগুন ধরিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানোর। এমনকী আধিকারিকদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারারও ছক হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া হয় ছোট ছোট দলে ভাগ হওয়া হামলাকারীদের কাছে। সেই ছক অনুযায়ী এসডিপিও পদমর্যাদার এক পুলিস অফিসারকে সিলিন্ডার খুলে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার চেষ্টাও হয়। কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচেছেন ওই অফিসার ও তাঁর সঙ্গী পুলিস কর্মীরা। ওই আক্রমণে যারা অংশ নিয়েছিল, তাদের সিংহভাগই বহিরাগত। তদন্তে জানা যাচ্ছে, বহিরাগতদের ওই দলে যেমন ছিল ঝাড়খণ্ডের পাকুড় ও বিহারের কিষানগঞ্জের যুবকরা, তেমনই ছিল চোরাপথে সীমান্ত পার হয়ে আসা বাংলাদেশিরাও।  
উন্মত্ত জনতাকে হাতিয়ার বানিয়ে এহেন হিংসাত্মক কাজকর্মের ‘আড়কাঠি’ হিসেবে গোয়েন্দাদের নজরে এখন সামশেরগঞ্জে ‘ডাক্তার’ বলে পরিচিত এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তি নিষিদ্ধ ঘোষিত এক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এই ‘ডাক্তার’ই বহিরাগতদের একাংশকে নিজের বাড়িতে এনে রেখেছিল বলে তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এই ডাক্তারের সঙ্গে মিলেই হিংসাত্মক আন্দোলনের যাবতীয় রূপরেখা, কৌশল ও পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত ওই সংগঠনের সাতজন সদস্য, যারা সম্প্রতি জামিনে পেয়ে জেল থেকে বেরিয়েছে। 

error: Content is protected !!