
অন্ধকারে নিমজ্জিত চিলি, বিপর্যয়ে রাজধানী সান্তিয়াগো
লাতিন আমেরিকার দেশ চিলিতে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। এই বিশাল বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে দেশটির রাজধানী সান্তিয়াগো অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। পাশাপাশি দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ তামার খনিগুলো বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হওয়ায়, বৈশ্বিক বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। সূত্রের খবর, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এই বিদ্যুৎ-বিভ্রাট শুরু হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে চিলি সরকার দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে এবং গতকাল রাত ১০টা থেকে আজ বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত উত্তরের আরিকা অঞ্চল থেকে দক্ষিণের লস লাগোস অঞ্চল পর্যন্ত কারফিউ জারি করে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যারোলিনা তোহা জানান, উত্তরাঞ্চলে একটি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ত্রুটির কারণে এই ব্যাপক ব্ল্যাকআউট হয়েছে, তবে তিনি সাইবার হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। চিলিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিপর্যয়। এই বিপর্যয়ের ফলে রাজধানী পুরোপুরি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায় এবং শহরজুড়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাইরেন বাজতে থাকে। হঠাৎ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ফলে রাজধানী সান্তিয়াগোর মেট্রোতে অনেক যাত্রী আটকে পড়েন। পরে অবশ্য বিশেষ ব্যবস্থায় আটকে পড়াদের বের করে আনা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশজুড়ে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রাত ১০টা নাগাদ জাতীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ নেটওয়ার্কের চাহিদার প্রায় এক-চতুর্থাংশ পুনরায় চালু করা হয়েছে এবং স্থানীয় সময় আজ সকাল নাগাদ বিদ্যুৎ পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিলির ন্যাশনাল ইলেকট্রিসিটি কোঅর্ডিনেটরের বোর্ড প্রেসিডেন্ট হুয়ান কার্লোস ওলমেদো। রাতের শেষ দিকে জাতির উদ্দেশে এক টেলিভিশন ভাষণে চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিক বলেন, ৮০ লাখ পরিবার এই বিভ্রাটের কারণে বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। তবে এরই মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরও বেশি বাড়িতে বিদ্যুৎ ফিরে এসেছে। বোরিক বলেন, ‘আজকের ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় যে, এক বা একাধিক কোম্পানির কারণে লাখ লাখ চিলিয়ানের দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হবে। এ জন্যই রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা।’ ন্যাশনাল ইলেকট্রিসিটি কো-অর্ডিনেটর জানিয়েছে, বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণ এখনো তদন্তাধীন। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক আর্নেস্তো হুবার বলেন, ‘আমরা কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় চালু করেছি, মূলত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো।’ এদিকে, এই বিদ্যুৎ-বিভ্রাট দেশটির উত্তরের খনি অঞ্চল থেকে শুরু করে মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। মূলত এই অঞ্চলেই চিলির বেশির ভাগ জনগণ বাস করে। এতে গুরুত্বপূর্ণ তামার খনিগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। চিলি বিশ্বে সবচেয়ে বড় তামা উৎপাদক। বিশ্বের বৃহত্তম তামার খনি এসকোন্ডিদা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে বলে একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত খনি সংস্থা কোদেলকো জানিয়েছে, তাদের সব খনি বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। কোদেলকো জানিয়েছে, তাদের চুকিকামাতা, আন্দিনা, সালভাদর ও এল তেনিয়েন্তে খনিগুলো সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন এবং অন্য খনিগুলো আংশিকভাবে ব্যাকআপ জেনারেটরের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। অ্যান্তোফাগাস্তা ও অ্যাংলো আমেরিকান জানিয়েছে, তাদের খনিগুলো জেনারেটরের সাহায্যে পরিচালিত হচ্ছে। চিলির জাতীয় দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রতিক্রিয়া সংস্থা জানিয়েছে, বিদ্যুৎ-বিভ্রাট উত্তরের আরিকা ও পারিনাকোতা অঞ্চল থেকে দক্ষিণের লস লাগোস অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। তবে কোনো জরুরি পরিস্থিতির খবর পাওয়া যায়নি। চিলির সিভিল অ্যাভিয়েশন অথোরিটি জানিয়েছে, সান্তিয়াগোর আরতুরো মেরিনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তবে ল্যাটাম এয়ারলাইনস জানিয়েছে, বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণে কিছু ফ্লাইট প্রভাবিত হতে পারে।