
নজিরবিহীনভাবে রাজ্যপালের সম্মতি ছাড়াই ৩টি আইন পাশ তামিলনাড়ুতে, ২২টি বিল নিয়ে আশায় বাংলা
আইনসভায় পাশ হওয়া বিল অনন্তকাল ধরে আর আটকে রাখতে পারবেন না রাষ্ট্রপতি। তিন মাসের মধ্যেই নিতে হবে সিদ্ধান্ত। যদি বাড়তি সময় প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তাহলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে তার কারণ জানাতে বাধ্য থাকবেন রাষ্ট্রপতি। ঐতিহাসিক এই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিবেচনার জন্য আসা যে কোনও বিলে মতামত জানানোর ক্ষেত্রে এই প্রথম রাষ্ট্রপতির জন্যও বেঁধে দেওয়া হল সময়সীমা। সৌজন্যে অবিজেপি রাজ্যে নির্বাচিত সরকার বনাম রাজ্যপাল সংঘাত। বিধানসভায় পাশ হওয়া সত্ত্বেও ১০টি বিল রাষ্ট্রপতির বিবেচনার অছিলায় ঝুলিয়ে রেখেছিলেন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি। তাঁর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের নেতৃত্বাধীন ডিএমকে সরকার। রাজ্যপালের কাজকে মঙ্গলবার ‘অসাংবিধানিক’ বলেই তোপ দাগে শীর্ষ আদালত। সেই মামলার বিস্তারিত রায় শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে। সেখানেই বিল নিয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণে রাষ্ট্রপতির জন্যও তিন মাসের সময় কার্যত নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে হাতিয়ার করে শনিবার রাজ্যপালের স্বাক্ষর ছাড়াই ১০টি বিল আইনে পরিণত হয়েছে তামিলনাড়ুতে। সেইমতো বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ডিএমকে সরকার। দেশে এই প্রথম আইনসভায় পাশ হওয়া কোনও বিল রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের সম্মতি ছাড়াই আইনে পরিণত হল। এই তালিকায় রয়েছে তামিলনাড়ু বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধনী আইনও। বিজ্ঞপ্তিতে সাফ জানানো হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়কেই বিলগুলির পক্ষে সম্মতি বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
এই পদক্ষেপে আশার আলো দেখছে পশ্চিমবঙ্গও। কারণ, এরাজ্যের বিধানসভায় পাশ হওয়া সত্ত্বেও ধর্ষণবিরোধী অপরাজিতা বিল, গণপিটুনি প্রতিরোধী বিল, হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অ্যামেন্ডমেন্টের মতো ২২টি বিল দীর্ঘদিন ধরে সম্মতির অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে রাজভবনে। এবার কি সেগুলিও আইনে পরিণত করা যাবে? রাজ্যপালের সম্মতির তোয়াক্কা না করেই? এপ্রসঙ্গে রাজ্যের পরিষদীয়মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘সংবিধানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিল সংক্রান্ত ফাইল অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেলে রাখছিলেন বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল। এটা আইনসম্মত নয়। আজ সুপ্রিম কোর্টকে এটা মনে করিয়ে দিতে হল। এরাজ্যে তামিলনাড়ুর মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, সেব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী।’ প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য, নির্দিষ্ট সময়ে বিল ছাড়া জরুরি। না হলে পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়নমূলক প্রকল্প থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সমস্যা হয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এব্যাপারে জট কাটবে। সংবিধানের ২০১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাজ্যপাল কোনও বিলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না নিয়ে তা রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য পাঠাতে পারেন। তখন রাষ্ট্রপতিকে সেই বিলে সম্মতি কিংবা অসম্মতি জানাতে হয়। সেই সিদ্ধান্তগ্রহণের জন্য সংবিধানে কোনও সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। তামিলনাড়ু সরকারের দায়ের করা মামলার রায়ে সেই প্রেক্ষিতকেই সামনে আনেন বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা এবং আর মহাদেবনের বেঞ্চ। রায়ে সাফ বলা হয়েছে, ২০১ অনুচ্ছেদের অধীনে রাষ্ট্রপতির পালনীয় কর্তব্য বিচার বিভাগের পুনর্মূল্যায়ন সাপেক্ষে সংশোধনযোগ্য। রাষ্ট্রপতির কোনও ‘পকেট ভেটো’ নেই। তাই হয় তিনি বিলে সম্মতি জানাবেন, নয় খারিজ করবেন। যুক্তিসঙ্গত সময়সীমার মধ্যেই তাঁকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই সূত্রেই নজিরবিহীনভাবে রাষ্ট্রপতির জন্য তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দিল শীর্ষ আদালত।