বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের জেরে ৪ দিন লাল সতর্কতা জারি

মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে তৈরি হলো নিম্নচাপ। কয়েক দিন ধরেই সমুদ্রে একটি ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টির আবহ তৈরি হয়েছিল। সোমবার ঘূর্ণাবর্তটি তৈরি হওয়ার পর থেকেই তার শক্তি বাড়তে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটায় ওই ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হয়। আজ বুধবার ওই নিম্নচাপ আরও কিছুটা শক্তি বাড়াবে-এমনটাই অনুমান আবহবিদদের। ওডিশার উত্তর উপকূলের কাছে তৈরি ওই নিম্নচাপের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সতর্কবার্তা জারি করেছে হাওয়া অফিস।জানানো হয়েছে, আগামিকাল বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় লাল সতর্কতা জারি থাকছে। অন্য দিকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত চার দিন লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে শুক্রবার জারি হয়েছে চরম ভারী বৃষ্টির (২০ সেন্টিমিটারের বেশি) সতর্কবার্তা। কলকাতাকে লাল সতর্কতার বাইরে রাখা হলেও এখানে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা খুব বেশি বলেই মনে করা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে এই নিম্নচাপ যে সময়ে তৈরি হয়েছে তার তিন দিন আগে দেশে দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বাতাস ঢুকেছে। সাধারণত কেরালায় বর্ষা প্রবেশের সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে উত্তরবঙ্গে বর্ষা ঢোকে। এ বার বঙ্গোপসাগরে তৈরি ওই নিম্নচাপ কি বাংলায় নিম্নচাপ প্রবেশের পথে বাধা হতে চলেছে? এই প্রসঙ্গে মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার উপমহাধ্যক্ষ সোমনাথ দত্ত বলেন, ‘নিম্নচাপ মৌসুমি বাতাসের পথে বাধা হবে না। আমাদের হিসেব বলছে শুক্রবার নাগাদ উত্তরবঙ্গে বর্ষা নেমে যাবে।’ তবে ওই নিম্নচাপের জন্যই বাংলা এ বারে আনুষ্ঠানিক ভাবে বর্ষা নামার ব্যাপারটা তেমন ভাবে বুঝতে পারবে না কারণ রাজ্যে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রাক-বর্ষার বৃষ্টি। এর সঙ্গে নিম্নচাপ–প্রভাবিত বৃষ্টি মিশে গিয়ে মে–র শেষ কয়েক দিন পরিস্থিতি বেশ খারাপ হতে চলেছে। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আজ বুধবার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম, হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত অর্থাৎ অতিভারী বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হলুদ সতর্কতা জারি থাকছে কলকাতা–সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। অবস্থানগত কারণের জন্য নিম্নচাপ পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের উপর বড় রকমের প্রভাব ফেলতে চলেছে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুরে জেলা ও ব্লক স্তরে খোলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম। মঙ্গলবার সকাল থেকেই দিঘা ও মন্দারমণিতে সমুদ্র উত্তাল ছিল। পর্যটকরা যাতে কোনও ভাবেই সমুদ্রে নামতে না পারেন, তার ঘোষণা চলেছে। তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ত্রাণ শিবিরও। আবহাওয়া দপ্তরের পক্ষ থেকে মৎস্যজীবীদের ৩১ মে পর্যন্ত সমুদ্রস্নানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।দক্ষিমবঙ্গের পাশাপাশি সামনের কয়েক দিন উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতেও বড় রকমের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন আবহবিদরা। বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও কালিম্পংয়ের বিভিন্ন জায়গায় ও উত্তর দিনাজপুরে ২ থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত অর্থাৎ অতিভারী বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

error: Content is protected !!