
নিমেষে উধাও ২০ লক্ষ কোটি! ট্রাম্পের শুল্কবাণে শেয়ার বাজারে রক্তক্ষরণ, ৩০০০ পয়েন্ট পড়ল সেনসেক্স
আশঙ্কাই সত্যি হল। এশিয়ান শেয়ার বাজারগুলিতে ভয়াবহ পতনের পর সোমবার রক্তস্নাত ভারতীয় বাজারও!ট্রাম্পের শুল্কবাণে কার্যত ধসে গিয়েছে দেশের শেয়ার বাজার। দিনের শুরুতেই ৩ হাজার পয়েন্টেরও বেশি নীচে নেমে যায় সেনসেক্স। অন্যদিকে ১ হাজার পয়েন্ট পতনের সাক্ষী হয় নিফটিও। ভয়াবহ এই ধ্বংসযজ্ঞে বাজার থেকে উবে যায় প্রায় ২০ লক্ষ কোটি টাকা। বাজারের এই বেহাল দশায় চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত দেশের চার ধনকুবের। তথ্য বলছে, মুকেশ আম্বানি, গৌতম আদানি, সাবিত্রী জিন্দাল ও শিব নাদার, এই চার শিল্পপতি বাজারের পতনে যৌথভাবে খুইয়েছেন ১০ বিলিয়ন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৮৬ হাজার কোটি টাকা। ট্রাম্পের শুল্কনীতির জেরে সোমবার যে বড়সড় পতন হবে গোটা বিশ্বের শেয়ার বাজারে, সেই আশঙ্কা ছিলই। সেই মতো সোমবার বাজার খুলতেই দেখা যায়, প্রায় চার হাজার পয়েন্ট পড়েছে সেনসেক্স। ৩৯৩৯.৬৮ পয়েন্ট পড়ে ৭১ হাজারের ঘরে নেমে যায় সেনসেক্সের সূচক। প্রায় ৩.৯ শতাংশ পতন হয়েছে সেনসেক্সে। হাজার পয়েন্টের বেশি পড়ে যায় নিফটিও। সবমিলিয়ে ভারতের বাজারে বিনিয়োগকারীদের ১৯ লক্ষ কোটি টাকা উধাও হয়ে গিয়েছে একদিনের মধ্যেই। এই বিরাট ক্ষতির ধাক্কা থেকে রেহাই পায়নি ফোর্বসের রিয়েল-টাইম বিলিয়নেয়ার তালিকায় থাকা ভারতের শীর্ষ চার শিল্পপতি। রিপোর্ট অনুযায়ী, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এবং ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির সম্পদের পরিমাণ কমেছে সবচেয়ে বেশি। ৩.৬ বিলিয়ন ডলার কমে আম্বানির মোত সম্পত্তির পরিমাণ কমে হয়েছে ৮৭.৭ বিলিয়ন ডলার। ৩ বিলিয়ন ডলার কমেছে আদানি গ্রুপের প্রধান গৌতম আদানির সম্পত্তি। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৭.৩ বিলিয়ন ডলার। ওপি জিন্দাল গোষ্ঠীর প্রধান ও তাঁর পরিবারের সম্পত্তির পরিমাণ কমেছে ২.২ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে তাঁদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩.৯ বিলিয়ন ডলার। এই মুহূর্তে বিশ্বের ধনী তালিকায় ৪৫ নম্বরে নেমে গিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি এইচসিএল টেকনোলজিসের প্রতিষ্ঠাতা শিব নাদারও বিরাট ধাক্কা খেয়েছেন। ১.৫ বিলিয়ন ডলার সম্পত্তি খুইয়ে বর্তমানে তাঁর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০.৯ বিলিয়ন ডলার। ক্ষতি শুধু শিল্পপতিদের নয়, সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক আর্থিক রক্তক্ষরণ ঘটেছে। ট্রেন্ট, টাটা স্টিল, টাটা মোটরস, জেএসডব্লিউ স্টিল, শ্রীরাম ফিনান্স- একের পর এক সংস্থার শেয়ারের দাম হুহু করে পড়ছে। ৪ থেকে ৭ শতাংশ পড়ে গিয়েছে গাড়ি-আইটি সংস্থাগুলির শেয়ার। ৭ শতাংশ পড়েছে আদানি গোষ্ঠীর একাধিক সংস্থার শেয়ার। ছোট এবং মাঝারি সংস্থার শেয়ার যথাক্রমে ৬.২ এবং ৪.৬ শতাংশ পড়েছে। গুরুতর এই পরিস্থিতির জন্য সরাসরি ট্রাম্পের নীতিকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে গোটা বিশ্বের বাজার চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনও কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে অপেক্ষা করা ও নজর রাখা। তবে এই শুল্ক নীতিতে ভারতের খুব বেশি ক্ষতি নাও হতে পারে। কারণ, ভারতের জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ আসে মার্কিন রপ্তানি থেকে। শুধু তাই নয়, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা চলছে যা ভারতীয় পণ্যের শুল্ক কমাতে সাহায্য করতে পারে।