
দেশকে টুকরো করার চেষ্টা করবেন না, এটা আমরা মানবো নাঃ মুখ্যমন্ত্রী
বিরোধী দলনেতার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বিধানসভার অধিবেশন কক্ষ ৷ প্রধান বিরোধী দল বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ বিজেপির বিরুদ্ধে দেশে বিভাজন তৈরির চেষ্টার অভিযোগ করলেন ৷ বললেন, ‘‘দেশকে টুকরো করার চেষ্টা করবেন না । এটা আমরা মানবো না ৷’’ বুধবার বিধানসভার বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকারকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ বিজেপি ক্ষমতায় এলে শাসক দলের সংখ্যালঘু বিধায়কদের চ্যাংদোলা করে রাস্তায় ফেলার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তিনি ৷ সেই নিয়েই এদিন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিধানসভার অধিবেশন কক্ষ ৷ মুখ্যমন্ত্রী জবাব দেন শুভেন্দুর করা মন্তব্যের ৷ তিনি বলেন, “যখন আমরা কোনও চেয়ারে বসি, তখন উই কেয়ার ফর অল ৷” এই মন্তব্যের পরপরই বিজেপি বিধায়করা হট্টগোল শুরু করেন । তাঁদের অভিযোগ, রাজ্যে হিন্দুরা আক্রান্ত হচ্ছেন । অধ্যক্ষের হস্তক্ষেপের পরও বিজেপির তরফে স্লোগান চলতেই থাকে । বিজেপির সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের মাঝে মমতা বলেন, “দেশ সৌজন্যের দেশ । মানুষের জীবনে মানবিকতাই সবচেয়ে বড় ।” পাশাপাশি বার্তা দেন, দেশকে ভাগ করার চেষ্টা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না । এই পরিস্থিতিতে বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ পালটা সরব হন ৷ মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, “আপনি বলেছিলেন সত্যের জন্য কিছু ত্যাগ করা যায় না । তাহলে আপনি স্বীকার করবেন কি বিধানসভার সদস্য না হয়েও আপনি বিধানসভা ভাঙার কাজে যুক্ত ছিলেন ?” একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, “আপনার দলের এক বিধায়ক বলেছিলেন, আমরা 70, আপনারা 30। আপনাদের কেটে ভাগীরথীর জলে ভাসিয়ে দেব । তখন আপনি কী করেছিলেন ?” বিজেপির এই অভিযোগের পালটা জবাব দেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, “ফিরহাদ হাকিমকে আমি নিজে বলেছি, এই ধরনের কথা বলা যাবে না । মদন মিত্র বা হুমায়ুন কবীরের বক্তব্যের ক্ষেত্রেও আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি ।” তিনি দাবি করেন, তৃণমূল একটি ডিসিপ্লিনড দল এবং বিজেপির অভিযোগের 90 শতাংশই মিথ্যে । এরপরই বিজেপিকে নিশানা করে তিনি বলেন, “আপনাদের এই ধর্ম মানে শুধু মানুষকে খুন করা, কেটে ফেলা, টুকরো টুকরো করা ।” পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিদেশ সফর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন সৌদি আরবে যান, তখন তো ইরাক বা ইরানে যান না ।” বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে মুসলিমদের প্রার্থী না করার অভিযোগ ওঠে ৷ সেই নিয়েও সরব মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, “আপনারা মুসলিমদের কেন টিকিট দেন না ? আমি তো হিন্দুদের 79 শতাংশ টিকিট দিই, তখন তো আপনারা কিছু বলেন না !” বাংলার ভূগোল ও সীমান্ত প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “বাংলা বাংলাদেশের বর্ডার । সেনসিটিভ ইস্যু ।” এরপরই বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “এক মণিপুর চালাতে পারছেন না, হিমসিম খাচ্ছেন । আর আপনারা চালাবেন বাংলা ?” বুধবারের শুভেন্দুর মন্তব্যের পালটা মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায় সম্পর্কে যেসব কথা বলা হয়েছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয় । আমি সেটাকে ধিক্কার জানাই ।” শুভেন্দু অধিকারীর নাম না নিয়ে তিনি বলেন, “যিনি এই কথা বলেছেন, তিনি একদিন পস্তাবেন । তিনি তিনবার দল বদলেছেন ।” শুভেন্দুর সাম্প্রতিক মন্তব্যকে কটাক্ষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তুমি এখন শুধু জামাটা বলেছো । এই জামাটা আবার যেন না লাল জামায় পরিণত হয় !” মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের স্থিতিশীলতার দাবিকেও কটাক্ষ করেন ৷ তিনি বলেন, “দু’টো দল নিয়ে সরকার চালিয়ে দেখাচ্ছেন যে স্টেবল, কিন্তু আসলে সম্পূর্ণ আনস্টেবল ।” বিজেপির রাজনৈতিক চক্রান্ত নিয়ে তিনি বলেন, “এরা শুধু ভুল এজেন্সি দিয়ে কাজ করে । এক বড়বাবু আরেক বড়বাবুর কাছে গিয়ে বলে কাকে ইডি ধরবে, কাকে সিবিআই ধরবে ।” সবশেষে তিনি বলেন, “এই হাউজ সকলের । বাংলা একদিন ভারতের রাজধানী ছিল । এই ভারতকে তাচ্ছিল্য করবেন না । দেশকে টুকরো করার চেষ্টা করবেন না । এটা আমরা মানবো না !”