
‘বাংলা আপনাদেরই গৃহ, এখানে আসুন, বিনিয়োগ করুন’, শিল্পপতিদের কাছে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
শিল্পের অনুকূল পরিবেশ, আদর্শ পরিকাঠামো রয়েছে এই বাংলায়। বাংলার শিল্পবান্ধব পরিবেশের কথা দেশে হোক বা বিদেশে শিল্পপতিদের সামনে তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিউটাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে আজ অষ্টম বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধন করে মমতা বলেন, এখন আর লোডশেডিং হয় না। ধর্মঘট হয় না বাংলা, ফিরেছে কর্মসংস্কৃতি। আমরা বিভাজন করি না আমরা একতায় বিশ্বাসী। এপর্যন্ত বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে আসা বিনিয়োগ প্রস্তাবের সিংহভাগ রূপায়িত হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে কার্যত চাঁদের হাট। অংশ নিয়েছেন ৪০ দেশের দুশোর বেশি প্রতিনিধি। রয়েছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, মুকেশ আম্বানি, সজ্জন জিন্দালরা। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য স্তরে শিল্প সমন্বয় কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন মুখ্য সচিব। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন শিল্পপতিরা। সঞ্জীব গোয়েঙ্কা বলেন, বড় কথা হল, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সব সমস্যার কথা বলা যায়। অপেক্ষা করতে হয় না। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, দিদিকে সব সময়েই পাওয়া যায়। আমি অবাক হয়ে যাই, এক ব্যস্ততার মাঝে কোনও মেসেজ করলেই উনি উত্তর দেন। মুকেশ আম্বানি বলনে, ‘দিদি’র প্রশংসায় পঞ্চমুখ আম্বানি। তাঁর নামের মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করে বললেন, অক্লান্ত নেত্রী তিনি। বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগের সাতটি সম্মেলন থেকে মোট ১৯ লক্ষ ৫১ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছিল। এর মধ্যে ১২ লক্ষ কোটি টাকার প্রস্তাব ইতিমধ্যেই রূপায়িত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, কী হবে এই সম্মেলন করে। কিন্তু আমাদের দেখাদেখি অন্য সব রাজ্যও এ ধরনের সম্মেলন করছেন। আর তাছাড়া পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এই সম্মেলন জরুরি। তিনি আরও বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে শীর্ষে বাংলা, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পেও এক নম্বরে। লক্ষীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্যে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্বমঞ্চে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প পুরস্কৃত হওয়া, বললেন দুয়ারে সরকার পরিষেবার কথা জানালেন মমতা। গোটা দেশের জিডিপির তুলনায় রাজ্যের জিডিপি বৃদ্ধি বেশি। গোটা দেশের মধ্যে একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসে নির্বাচিত নারী প্রতিনিধি ৩৯.১ শতাংশ। সে কথাও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বাণিজ্য সম্মেলন নিয়ে রাজনীতিকদের কাছে জবাবদিহি করব না। জবাবদিহি সাধারণ মানুষের কাছে। তথ্য দিয়ে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক সমালোচনার জবাব দিতে তিনি বাধ্য নন, কিন্তু তার সরকার মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। রাজ্যের একাধিক সম্ভাবনা এবং নতুন শিল্প বান্ধব নীতির কথা তুলে ধরে রাজ্যে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। শিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যাবতীয় সমস্যার চটজলদি সমাধানের লক্ষ্যে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে রাজ্য স্তরের শিল্প সমন্বয় সমিতি গঠনের কথাও তিনি ঘোষণা করেন। অন্যদিকে চা বাগান এলাকায় পর্যটনের জন্য ৩০% জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। ডেটা ও এক্সপোর্ট পলিসি: নতুন নীতির মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি ও রফতানি খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা। রাজ্যের সম্ভাবনাময় দেউচা পাচামি খনি প্রকল্পে আগামিকাল থেকে ব্যাসল্ট উত্তোলনের কাজ শুরু করার কথাও মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। শিল্পপতিদের রাজ্যে বিনিয়োগের আহ্বান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলা আপনাদেরই গৃহ, এখানে আসুন, বিনিয়োগ করুন।’