
স্কুল শিক্ষিকার পোশাক নিয়ে হেনস্থা, কড়া ব্যবস্থার নির্দেশ হাইকোর্টের
পোশাক ফতোয়া বিতর্কে মানসিক অবসাদের শিকার হয়েছিলেন শিক্ষিকা। পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে স্কুলে প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছিল অভিভাবক ও স্কুলেরই কিছু শিক্ষকা। তাঁদের একটাই বক্তব্য শাড়ি পরে স্কুলে আসতে হবে ওই শিক্ষিকাকে। প্রায় 7 বছর অসুস্থ থাকার পর সুস্থ হয়ে স্কুলে যোগ দিতে গেলেও তাঁকে স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয় না ৷ এই ঘটনায় স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার পোশাক বিধি নিয়ে কড়া নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের ৷ শুক্রবার (গতকাল) মামলা চলাকালীন শিক্ষিকার পক্ষের আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরী জানান, কোন শিক্ষিকা কী ধরনের পোশাক পরবেন তা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ফতোয়া জারি করতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন নির্দেশে বলা আছে পোশাকের শালীনতা বজায় রেখে শিক্ষিকা যে কোনও পোশাক পরতে পারেন ।
- ২০১০ সালের ঘটনা। আর পাঁচটা দিনের মতোই বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্কুলে আসেন শিক্ষিকা মধুরিমা দাস। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশপুর প্রফুল্ল বালিকা বিদ্যালয়ের ইংরাজি বিষয়ের শিক্ষিকা তিনি। শিক্ষিকার সালোয়ার কামিজ পরা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক।
- স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। ইংরেজির শিক্ষিকার আবেদন ছিল, যেহেতু তাঁকে বাঁশদ্রোনি থেকে বাসন্তী প্রতিদিন বাসে, ট্রেনে যাতায়াত করতে হয়, তাই প্রতিদিন স্কুলে শাড়ি পরে আসা সম্ভব নয়। এই সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে, পরে শিক্ষা দফতরকে জানানো হলেও সুরাহা হয়নি।
- ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে ছাত্রী, অভিভাবকদের একাংশের উপস্থিতিতে এবং বেশকিছু শিক্ষিকা তাঁকে চূড়ান্ত হেনস্থা করেন। শিক্ষিকাকে মারধর ও মাথার চুল কেটে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে বাসন্তী থানার পুলিশ উদ্ধার করেন। তারপর থেকেই ওই শিক্ষিকা মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকেন। স্কুলে তাঁকে আর ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁর বেতন বন্ধ করে দেয় ৷ শিক্ষিকার কোনও খোঁজও নেয়নি স্কুল।
- প্রায় ৭ বছর মানসিক চিকিৎসাধীন থাকার পর ফিট সার্টিফিকেট পান। এই পুরো বিষয়টি শিক্ষা দফতরকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন তিনি। ৫ বছর কলকাতা হাইকোর্টের বিভিন্ন এজলাসে ঘুরে মামলা আসে বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়রে এজলাসে।
- এদিন বিচারপতি বিষয়টি শোনার পর বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্কুল পরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন সমস্ত দিক খতিয়ে দেখার পর ওই শিক্ষিকাকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
শুক্রবার (গতকাল) মামলা চলাকালীন শিক্ষিকার পক্ষের আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরী জানান, কোন শিক্ষিকা কী ধরনের পোশাক পরবেন তা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ফতোয়া জারি করতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন নির্দেশে বলা আছে পোশাকের শালীনতা বজায় রেখে শিক্ষিকা যে কোনও পোশাক পরতে পারেন । এদিন বিচারপতি বিষয়টি শোনার পর বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্কুল পরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন সমস্ত দিক খতিয়ে দেখার পর ওই শিক্ষিকাকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।